রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

হালদা নদীর মা মাছের দিকে ‘শকুন দৃষ্টি’

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উপমহাদেশের কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। এ নদীর প্রাণ মা মাছ। মা মাছ না থাকলে নদীটিই অর্থহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু অতিগুরুত্বপূর্ণ এ মা মাছ নিধনে চলছে প্রতিযোগিতা। অসাধু ব্যবসায়ীদের শকুন দৃষ্টি পড়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ এই মা মাছের দিকে। নির্বিচারে কারেন্ট জাল বসানো হচ্ছে এ নদীতে। প্রতিনিয়ত কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না।

জানা যায়, তিন মাস আগে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীন যোগদানের পর হালদা নদীতে মা মাছ নিধনের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। ইতিমধ্যে হালদা নদী থেকে ৯২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। তা ছাড়া ৫টি ড্রেজার আটক, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একজনকে দুই মাসের কারাদ , ৫৬ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে। তবু থেমে নেই অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের শকুনি দৃষ্টি। যখনই অভিযান তখনই জব্দ হয় কারেন্ট জাল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও অবৈধভাবে মা মাছ নিধনকারী ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।

 

ইউএনও মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘হালদা নদী জাতীয় সম্পদ। যে কোনো মূল্যেই একে রক্ষা করতে হবে। আর এ নদীর প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো মা মাছের পোনা ছাড়া। তাই মা মাছ রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এমনকি খবর পেয়ে রাত ২টার সময়ও হালদা নদীতে গিয়ে কারেন্ট জাল আটক করি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মা মাছের পোনা ছাড়ার মৌসুম। তাই এ সময়টায় নদীতে মা মাছগুলোকে পোনা ছাড়ার দূষণমুক্ত প্রয়োজনীয় পরিবেশ দিতে হবে। অন্যথায় হালদা নদীতে পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের মতো বিপর্যয় ঘটবে। কারণ মা মাছ না থাকলে ডিম কে ছাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ লাখ মিটার জাল জব্দ করেছেন। ভাবতেও অবাক লাগে, এ জাল যদি হালদা নদীতে বসানো হতো, তাহলে একটি মা মাছও কি থাকত? অথচ এখনই দরকার মা মাছকে পোনা ছাড়ার পরিবেশ দেওয়া। তাই এখন জরুরি ভিত্তিতে জাল বসানো ও দূষণ বন্ধ করতে হবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৯৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ নদীটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলায় অবস্থান। কিন্তু বর্তমানে কেবল হাটহাজারী অংশেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অন্য দুই উপজেলা অংশের নদীতে প্রয়োজনীয় অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় সেখানে মা মাছ নিধন, বালি উত্তোলন, দূষণসহ নানা অত্যাচারের কবলে পড়েছে প্রাকৃতিক এ নদীটি।

সর্বশেষ খবর