সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিলেটে একই স্টাইলে ছয় খুন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে একই স্টাইলে ছয় খুন

বাসা-বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয় রাতে। সকালে খোলা মাঠে বা রাস্তার পাশে মেলে রক্তাক্ত লাশ। গত এক মাসে সিলেটে এভাবে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে ছয়টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের তদন্ত ও গ্রেফতার ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিতে দেখা গেছে, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ঘটছে এসব হত্যাকা-। এ নিয়ে সচেতন মহলে বেড়েই চলেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ১৭ মার্চ রাতে ওসমানীনগর উপজেলার পূর্ব তাজপুর গ্রামের এক প্রবাসীর বাড়ির কেয়ারটেকার আনিছ উল্লাহ আনিছকে ঘর থেকে ডেকে নেয় কয়েক ব্যক্তি। সকালে ওই ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পানির ট্যাঙ্কের ভিতর। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, আনিছ উল্লাহর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা রক্ষিত আছে। তাকে খুন করলে ওই টাকা পাওয়া যাবে এমন লোভ থেকে ওই তিন ব্যক্তি তাকে খুন করেছে। ১৫ মার্চ একই উপজেলার মান্দারুকা গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান মছু (১৫) নামের এক কিশোরের লাশ স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে উদ্ধার করা হয়। আগের দিন সন্ধ্যায় তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল তার তিন বন্ধু। পরে পুলিশ মো. জীবন নামে মছুর এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে। সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন, অপরিচিত এক মেয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা নিয়ে তিন বন্ধু মিলে মছুকে খুন করে। ১২ মার্চ নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন সাব্বির আহমদ (২২) নামের এক যুবক। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে নগরীর মজুমদারির নিজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল তার বন্ধুরা। এ খুনের ঘটনায় মামলা হয় সাব্বিরের বন্ধুসহ ১৮ জনকে আসামি করে। ১৩ মার্চ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দরাকুল এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয় বদরুল আমিন (২০) নামের এক তরুণকে। পর দিন সকালে গলাকাটা লাশ মেলে তার। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সাকরপুর গ্রামের সাবুল নমঃ (২৪) নামের এক তরুণকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পর দিন সকালে উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের কোটাপাড়া নামক স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি একই কায়দায় খুনের ঘটনা ঘটে সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায়। শাহেদ আহমদ (১৬) নামের এক স্কুলছাত্রকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় তার বন্ধুরা। পরে আম্বরখানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় শাহেদ। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় সে। পরে তার বন্ধুসহ ১৯ জনকে আসামি করে মামলা হয়। চলতি মার্চ মাসের ১২ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে সিলেটে এই কায়দায় খুন হন চারজন।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনোখুনি প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দিন দিন সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। এ অবক্ষয়ের কারণেই খুনখারাবির সংখ্যা বাড়ছে। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা না গেলে অপরাধ কর্মকান্ড দমানো সম্ভব হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর