মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে ৫০টি দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে সেই দিনের জঘন্যতম নৃশংসতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রত্যক্ষদর্শী ও শহীদদের সন্তানরা। তারা দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি এবং হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। গতকাল বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটি আয়োজিত ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা : জবাবদিহিতা ও স্বীকৃতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। উপকমিটির চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমিরের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন উপকমিটির সদস্য সচিব ড. শাম্মী আহমেদ। গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ব্রিটিশ নাগরিক জুলিয়ান ফ্রান্সিস সেদিনের নির্মম হত্যাকাণ্ড বর্ণনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফারহাদের সঞ্চালনায় এতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে কর্নেল (অব.) ফারুক খান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলিমুজ্জামান চৌধুরীর মেয়ে ড. নুজহাত চৌধুরীসহ অনেকেই বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। বক্তারা বলেন, বিশ্বের বুকে পরবর্তীতে যেন কোনো শাসক গোষ্ঠী এমন গণহত্যার সাহস না পায় সে জন্য ২৫ মার্চ দিনটির স্বীকৃতি এবং হত্যাকারীদের বিচার হওয়া জরুরি।

 ব্রিটিশ নাগরিক জুলিয়ান ফ্রান্সিস মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আমি কখনো ১৯৭১ সালকে ভুলতে পারব না। এখনো মাঝে মধ্যে ভোর বেলা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায়। আমি দেখি, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আছি এবং আমার হাতে একটি শিশুর লাশ। মার্চ মাসের ২৫ তারিখকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার উপযুক্ত সময় জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে দিনটির স্বীকৃতি পাওয়া একটু কঠিন। কেননা ভিন্ন ভিন্ন পার্লামেন্টে এ বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আমরা এ বিষয়টি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে শুরু করতে পারি। যেখানে বাংলাদেশের তিনজন এমপি রয়েছেন। এরপর বিশ্বের অন্যান্য পার্লামেন্টেও কাজটি শুরু করা যায়।

শাম্মী আহমেদ বলেন, আমার বাবা ’৭০-এর নির্বাচনে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু রাজাকাররা খুলনায় তাকে আটক করে। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময় তার অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সেমিনার কক্ষ ভারি হয়ে ওঠে। নিজ আসন ছেড়ে তার কাছে পানি নিয়ে পৌঁছে দেন স্পেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালভারো দে সালাস জেমিনেজ দে আজসারাতে। শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করে শাম্মী বলেন, আপনারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে ভিডিও দেখেছেন সেখানে আমার বাবাও আছেন। ৪৮ বছর পর এখন আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাইছি। তাকে যে হত্যা করা হয়েছে এর স্বীকৃতি চাইছি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা সম্ভব নয়, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাকে স্বীকৃতি না দেয়। আশা করছি, তারা আমাদের পাশে থাকবে। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায় ভাটা পড়ে।

সর্বশেষ খবর