বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
সমস্যার শেষ নেই তিন সিটিতে

মশা আর যানজটে নাকাল রাজশাহী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

মশা আর যানজটে নাকাল রাজশাহী

যানজটের রাজশাহী

আগের মেয়াদে মেয়র থাকাকালীন বিশ্বের সেরা ১০ সিটির তালিকায় ধূলিকণা মুক্ত নগর হিসেবে নাম উঠে এসেছিল রাজশাহীর। মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে লিটনের পরাজয়ের পর তিলোত্তমা রাজশাহীর সেই সৌন্দর্য ক্রমেই ধূসর হয়ে পড়ে। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আবারও নগর নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। চলছে খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোর সংস্কার কাজ। নতুন ড্রেন নির্মাণ আর রাতেরবেলা রাজশাহী নগরকে রঙিন আলোয় আলোকিত করার উদ্যোগও। মূলত লিটনের হাত ধরে উন্নয়নে ফিরছে রাজশাহী। ইতিমধ্যে চায়না, নরওয়ে, ভারত এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডে  রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত ৫ মাসে ১৭৩ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড  হাতে নিয়েছেন মেয়র।

রাসিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকা রানীবাজার-সাগরপাড়া সড়কটির কার্পেটিং কাজ শেষ হয়েছে। সাহেবাবাজার বড় মসজিদের পাশে মুন লাইট গার্ডেনের সামনে থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় পর্যন্ত এবং ফুদকিপাড়া কালিমন্দির থেকে মুন লাইন গার্ডেন পর্যন্ত রাস্তার কার্পেটিং কাজ শেষ হয়েছে। উত্তরের প্রথম ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজও শেষের দিকে। এ বছরই সেটি চালু হওয়ার কথা। এই প্রকল্পটি তিনি আগের মেয়াদে গ্রহণ করেছিলেন। অন্য সড়কগুলোতেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।

রাজশাহী নগরীর ফুটপাথ দখলমুক্তকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বিনামূল্যে ডাস্টবিন বিতরণ, উপযুক্ত স্থানে আবর্জনা ফেলার বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিসহ নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশে মাঠে আছেন মেয়র। যেখানেই অপরিচ্ছন্নতা সেখান থেকেই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিজস্ব ওয়াকিটকির মাধ্যমে ডেকে নিয়ে পরিষ্কার করাচ্ছেন। মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, সিটি করপোরেশনের আয় বাড়াতে ২০০৯ সালে তিনি মেয়র থাকাকালীন শুরু হয়েছিল দারুচিনি প্লাজার নির্মাণ কাজ। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে বাণিজ্যিক বহুতল এই ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হলে ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রাসিক মেয়র জানান, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সে জন্য বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। নরওয়ে, চায়না, ভারত পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে নগরীর ঠিক পাশে পবায়। সেখানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে। এ বছরের মধ্যে দুটি চার তারকা মানের হোটেলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে প্রত্যাশা তা পূরণ করা যাবে। মেয়র জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে তার সময় নেওয়া ১০ প্রকল্প অর্থাভাবে আলোর মুখ দেখছিল না। এবার তিনি সেগুলোকে আলোরমুখ দেখাতে উদ্যোগ নেবেন।

অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু হলেও নাগরিক সুবিধা এখনো ভোগান্তির মধ্যে। মশার কামড়, যানবাহনের জটলা, কর্মসংস্থানের অভাব-নগরবাসীকে দিন দিন হতাশার মধ্যে ফেলছে। একদিকে যখন প্রশস্ত সড়কের কাজ চলছে, তখন অন্যদিকে মশার কামড়ে ওষ্ঠাগত নাগরিক জীবন। এখন ওষুধের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে রাসিকের মশক নিধন কার্যক্রম। এ অবস্থায় মশার জীবাণুবাহী রোগ চিকনগুনিয়া ও জাপানি এনকেফেলাইটিস রোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন নগরীর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বেশিরভাগ ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো কার্যক্রম নেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেনের পানি উপচে পড়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এতে নগরীজুড়ে বেড়েছে মশার দাপট। কয়েল কিংবা অন্য কোনো উপায়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই মিলছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার কামড়ে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। আর এসব মশা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রোগ চিকনগুনিয়ার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক হাছানাত আলী বলেন, নগরীতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু নাগরিক সুবিধা এখনো মানুষ সেভাবে পাচ্ছে না। গ্যাস আছে, কিন্তু গ্যাস ভিত্তিক কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। ফলে মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব দিন দিন বাড়ছে। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার কবলে পড়ে পুরো নগরী এখন জঞ্জালে পরিণত হচ্ছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সিটি করপোরেশনের। এ ছাড়া শিক্ষানগরী বলা হলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নিচ্ছে না রাসিক।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মশার দাপটে নগরবাসী অতিষ্ঠ। রাস্তাঘাটে অনিয়ন্ত্রিত রিকশা ও অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, ফুটপাথ দখল, যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপ-এতে নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই।

নাগরিক ভোগান্তি আছে স্বীকার করে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘সাড়ে চার বছরে রাজশাহীকে অনেক পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যিনি মেয়র ছিলেন (বুলবুল), তিনি আমার নেওয়া প্রকল্পগুলোও চালু রাখতে পারেননি। এখন সেগুলো নতুন করে করতে হচ্ছে। ফলে একটু সময় লাগছে।

সর্বশেষ খবর