সুনামগঞ্জে হাওর আন্দোলন নেতা আজাদ মিয়াকে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছে শ্রাবণুজ্জামান ওরফে শ্রাবণ মিয়া নামে এক পান দোকানি। আজাদের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ পাবেল ও রিপনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হত্যার মিশনে নামে শ্রাবণ। হত্যার সময় পাবেল ও রিপনসহ বেশ কয়েকজন শ্রাবণকে সহযোগিতা করে। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান। পুলিশ সুপার জানান, গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে আজাদ হত্যার মূল ব্যক্তি শ্রাবণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে শহরের দক্ষিণ আরপিন নগ এলাকার মখলিছুর রহমানের ছেলে। এর আগে আটক করা হয় শ্রাবণের ভাই মাহবুবকে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক হয় শ্রাবণ।
পুলিশ সুপার জানান, ‘আটকের পর রাতে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে শ্রাবণ। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাে ব্যবহৃত দুই ফুট লম্বা একটি স্টিলের পাইপ উদ্ধার করা হয় শ্রাবণের বাসা থেকে। জব্ধ করা হয় হত্যাকাে র রাতে ব্যবহৃত তার জুতা ও হুডি।’ তিনি আরও জানান, ‘১৪ মার্চ সকালে আজাদকে আঘাত করার পরিকল্পনা করে তার প্রতিপক্ষরা। দিনভর কয়েকজন মিলে তাকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অনুসরণ করতে থাকে। কিন্তু দিনের বেলায় আঘাত করতে গিয়ে সফল হতে পারেনি তারা। পাবেল ও রিপন ভাড়াটে খুনি শ্রাবণের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয় আজাদকে। তিনি জানান, ‘রাত ১০টার দিকে কেনাকাটা করে আজাদ বাসায় ফেরার পথে সড়ক ও জনপথের রেস্ট হাউসের সম্মুখে শ্রাবণ, রিপন, পাবেল ও অন্যান্য সহযোগীরা তাকে আক্রমণ করে। ভাড়াটে শ্রাবণ স্টিলের রড দিয়ে আঘাত করে আজাদের মাথায়। তাকে গুরুতর আহত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আক্রমণকারীরা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।’পুলিশ সুপার জানান, ‘আজাদ মিয়ার সঙ্গে উকিল আলী, পাবেল, রিপনসহ অন্যান্য কয়েকজনের পূর্ব বিরোধ ছিল। আসামি পাবেল ইতিপূর্বে একটি নারী নির্যাতন মামলার আসামি হয়েছিল, যেটাতে আজাদ মিয়ার হাত ছিল বলে সে মনে করত। এ ছাড়া গত উপজেলা নির্বাচনের সময় আজাদ মিয়ার ভাইয়ের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় পাবেলের বন্ধু রিপনের। সেদিন রিপনকে মারধরও করা হয়। এই ঘটনায়ও আজাদ মিয়াকে দায়ী করে তারা। এসব কারণেই আজাদকে মারার পরিকল্পনা করে তারা।’
হাওর দুর্নীতির প্রতিবাদ করার কারণে হত্যাকা সংঘটিত হয়েছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্তে এ সংক্রান্ত কোনো কিছু এখনো পাওয়া যায়নি। তবে গভীরভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর পেছনে অস্ত্রদাতা, গডফাদার থাকলে তাদেরও বের করা হবে।
গত ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের পিটিআই এলাকায় গুপ্ত ঘাতকের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হন হাওর আন্দোলন নেতা আজাদ মিয়া। মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে তিন দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার পর ১৭ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। হত্যার ঘটনায় স্থানীয় মোল্লাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হকসহ ১২ জনকে আসামি করে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের বড়ভাই। মামলার পর পুলিশ উকিল আলী নামের এক আসামি গ্রেফতার করে।