রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে কান্না

পাঁচ ক্রোকারিজ দোকানের সবাই এখন নিঃস

মাহমুদ আজহার

ময়মনসিংহের দাপুনিয়ার বারুরি গ্রামের আবদুস সালাম। গুলশান-১ এ ডিএনসিসি মার্কেট-লাগোয়া কাঁচাবাজারের নিচতলায় ‘মা ক্রোকারিজ হাউস’ নামে তার পাঁচটি ক্রোকারিজের দোকান ছিল। গতকাল সকালে আড়াই ঘণ্টার আগুনে তার সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুড়ে ছাই হওয়া নিজের দোকানের চেহারা দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন সর্বস্ব হারানো এই ব্যবসায়ী। তার হাত ধরে আসা মামাতো ভাই রাকিবুল বারী রাসেল একই মার্কেটে ‘আল মদিনা ভ্যারাইটিজ’ নামে চারটি দোকান গড়ে তুলেছিলেন। একই পরিণতি হয় তারও। শুধু তাদের দুজনেরই নয়, ওই কাঁচাবাজারে প্রায় দেড়শর মতো দোকানের সবই ‘সর্বনাশা’ আগুন কেড়ে নিয়ে যায়। গতকাল সকালে তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। দুই বছর আগেও সালাম-রাসেলের সব দোকান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওই সময় সব হারিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন তারা। নিজের বসত, ভিটাসহ বাড়িতে সব আবাদি জমিজমা বিক্রি করে তারা আবারও কোনোমতে দোকানগুলো দাঁড় করান। অনেকদূর এগিয়েছিলেনও। এ কারণে তাদের বাড়ি গাড়ি কোনোটিই হয়নি। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বাড্ডা গোদারাঘাট এলাকায় এক ভাড়া বাসায় থাকতেন। গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা অসুস্থ। ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে বাড়িতেও কম যেতেন তিনি। নিজের ভাই আনিস, জহির, ফরহাদ, নিকটাত্মীয় মাহবুব, আবদুল আলিমসহ আরও অন্তত ১৫ জন সদস্য আবদুস সালামের দোকানে নিয়োজিত ছিলেন। তারা সবাই এখন নিঃস্ব। সবাই কাঁদছেন।

দোকানে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মা ক্রোকারিজে দেশি-বিদেশি উন্নত মানের ওয়ালমেট, রেক্সিনসহ যাবতীয় ক্রোকারিজ পণ্য ছিল। পাঁচটি দোকানে অন্তত চার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দোকানের কোনো ইন্স্যুরেন্স ছিল না। দোকানে কেউ মালিক ছিল না, সবাই মিলে যেন একটি পরিবার ছিল। এখন সবাই ধ্বংসের মুখোমুখি। এখানে প্রতিটি সদস্যের পরিবারও এই দোকানের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। এখন তারা সবাই নিঃস্ব। মা ক্রোকারিজের স্বত্বাধিকারী আবদুস সালাম কাঁচাবাজার দোকান মালিক সমিতির নেতাও ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আবদুস সালাম জানালেন, চোখের সামনে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এর আগেও একবার নিঃস্ব হয়েছি। অনেক কষ্টে নিজেকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটা গুছিয়ে এনেছিলাম। যার কারণে বাড়ি-গাড়ি কিছুই করিনি। বাবা-মা ও আমার পরিবারকেও বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত করায়নি। হাতে টাকা-পয়সা কম ছিল না। সবই ব্যবসার পেছনে ব্যয় করেছি। কাউকে দোষ দেব না। সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দেন।  আল মদিনা ভ্যারাইটিজের স্বত্বাধিকারী রাকিবুল বারী রাসেল জানান, কী থেকে কী হয়ে গেলাম। আমার প্রায় দুই কোটি টাকার আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চোখের সামনে এভাবে নিঃস্ব হতে দেখে আর ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারছি না। আগেও একবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন আর আমার কিছু নেই। পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর