সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে তিন মেগা প্রকল্প বিপন্ন করে তুলছে বালুঘাট

পাউবোর আপত্তি সত্ত্বেও ইজারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বিপন্ন হয়ে উঠছে সরকারের নেওয়া তিন মেগা প্রকল্প। প্রকল্পগুলো হলো বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক, ৮০ কোটি টাকার শহররক্ষা বাঁধ ও ৬০ কোটি টাকার পদ্মা ড্রেজিং প্রকল্প। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আপত্তি সত্ত্বেও এসব এলাকায় বালুঘাট ইজারা দিয়েছে জেলাপ্রশাসন। রাজশাহী মহানগরীর হাড়ুপুর ও নবগঙ্গা এলাকায় পাউবো সম্প্রতি প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেছে। এর কাছাকাছি এলাকায় তৈরি হচ্ছে কয়েক শ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পদ্মায় ড্রেজিং। কিন্তু একই এলাকায় জেলা প্রশাসন বালুঘাট ইজারা দেওয়ায় বড় বড় এসব প্রকল্প হুমকিতে পড়েছে। পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, হাড়–পুর ও নবগঙ্গায় বালুঘাট ইজারা না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে আগেই অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন সম্প্রতি অন্যান্য পয়েন্টের সঙ্গে এ দুটি পয়েন্টের বালুঘাটও ইজারা দিয়েছে। ফলে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলো নদী ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছরের মতো ১৮ মার্চ জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে রাজশাহীতে পদ্মার বেশকিছু বালুঘাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। পদাধিকারবলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এ কমিটির সভাপতি। নগরীর পশ্চিমের হাড়–পুর ও নবগঙ্গা বালুমহাল এলাকা দুটি ইজারা দিয়ে জেলা প্রশাসন ৫ কোটি ২ লাখ টাকা আয় করেছে। কিন্তু এ দুটি বালুমহাল পদ্মা নদীর তীরবর্তী শত কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন সরকারের মেগা প্রকল্প ‘রাজশাহী হাই-টেক পার্ক’ সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া আলোচিত বালুমহাল এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে সম্প্রতি ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীর সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একই সঙ্গে পদ্মার উজানে সোনাইকান্দি থেকে মাঝারদিয়াড় এলাকায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতে ড্রেজিংও শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পের এলাকায় আবারও বালুঘাট ইজারা দেওয়ায় এলাকাবাসীসহ রাজশাহীর সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ।

য় করে বালু এনে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে নদীতীরেই জমা করছেন। বালুর পাইপ ছিদ্র হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর দিয়ে অনবরত পানি আর ভেজা বালু চুয়ে আবার নদীতে পড়ছে। এতে শহররক্ষা বাঁধের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।

নগরীর হাড়–পুর ও নবগঙ্গা এলাকায় শিগগিরই নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। এ এলাকায় বালু ব্যবসায়ীদের শত শত নৌকা আসা-যাওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ বিঘিœত হবে। পাউবো কর্মকর্তারা মনে করেন, সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে হাড়–পুর-নবগঙ্গা বালুঘাটের ইজারা বাতিল করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ৫ কোটি টাকা আয় করতে গিয়ে সরকারের গৃহীত জনস্বার্থমূলক প্রকল্পগুলোয় ব্যয় হওয়া শত শত কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাই-টেক প্রকল্পের কোলঘেঁষে পর্বতসমান উঁচু করে বালু জমা করে রাখা হচ্ছে সারা বছর। সেখান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক আর ডাম্পার ভরে বালু পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ভারী এসব ট্রাক আর ডাম্পারের কারণে প্রকল্প এলাকাসহ হাড়ুপুর ও নবগঙ্গার শহররক্ষা বাঁধ কাম সড়কটিও ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে। এলাকার ছোট ও গলি সড়কগুলোর অবস্থা চলাচলের অযোগ্য। নগরীর ভিতরে এভাবে উঁচু করে বালু জমা রাখার কারণে এলাকার পরিবেশও হয়ে পড়ছে বিপন্ন।

এ ব্যাপারে পাউবো রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে শহররক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক হুমকির মুখে পড়বে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে। এ ছাড়া সব দিক বিবেচনা করে বালুমহাল ইজারা দেওয়া উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর