শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরিশালে স্থবির আওয়ামী লীগ

হতাশা কাটছে না বিএনপির

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে স্থবির আওয়ামী লীগ

মামলা-হামলায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর চোখের সামনে বিজয় কেড়ে নেওয়ার চিত্র দেখা বরিশাল বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখনো হতাশামুক্ত হতে পারছেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তৃণমূল থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনে।

ঠিক উল্টো চিত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। জাতীয়, সিটি এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একতরফা বিজয়ে ফুরফুরে মেজাজে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ফাঁকা মাঠে বিপুল বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী আত্মঅহমিকায় ভুগছেন। স্বার্থের দ্বন্দ্বে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগই এখন তাদের প্রতিপক্ষ। বর্তমান অবস্থায় দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা। যদিও জনসাধারণের আস্থা অর্জনে সুশাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

এদিকে দিন দিন জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। পক্ষান্তরে প্রতিনিয়ত শক্তি সঞ্চার করছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এর বাইরে বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন আর ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা কিছুটা থাকলেও অন্যরা শুধু নামমাত্র অবস্থানে। আর নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে নেই। তবে অন্তরালে তৎপর রয়েছে নেতা-কর্মীরা। সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা দলে নিষ্ক্রিয়তার ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘বিনা ভোটে সরকার নির্বাচিত হলে বিরোধীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করে। বিএনপি ১২ বছর সরকারের বাইরে। এই সময়ে মামলা-হামলা, গ্রেফতার এবং নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই আত্মগোপন ও কারাগারে রয়েছেন।’ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও বিএনপি শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এর আগে কেন্দ্র থেকে কমিটি চাপিয়ে দেওয়ার কারণে তৃণমূলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আগামীতে তৃণমূল থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে জেলা এবং মহানগর কমিটি করা হলে দল আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে স্বার্থের দ্বন্দ্বে নিজেরাই এখন নিজেদের প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় ও জাতীয় কর্মসূচিতে বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও স্বার্থের দ্বন্দ্বে নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকের শারীরিক ভাবভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এ কারণে মার্চের শেষ দিকে নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদ্য উদ্বোধন হওয়া অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি ওই ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় মহানগর আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, দুটো নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের            কমিটি গঠন হয়েছিল। দুটো লক্ষ্যই পূরণ হয়েছে। এখন কার্যক্রমে একটু ধীরগতি থাকাটা স্বাভাবিক। এ ছাড়া শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকারি দলের কর্মকাে  স্থবিরতা এসে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংসদের বিরোধী দল জাপার তেমন কোনো সাংগঠনিক অবস্থান নেই বরিশালে। নেতা-কর্মীরা অন্য দলে যোগ দেওয়ায় ক্রমশ রোগাক্রান্ত বাঘের মতো হয়ে পড়েছে। জেলা এবং মহানগর  নেতারাও নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্ত।

চরমোনাইর পীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দিন দিন শক্তি সঞ্চার করছে বরিশালে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়া একমাত্র ইসলামী আন্দোলন সাহস দেখিয়েছে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস্ পার্ক) সমাবেশ করার। তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে।

বরিশালের আরেক রাজনীতিক রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির কিছুটা তৎপরতা রয়েছে। দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচিতে হাতে গোনা কিছু লোকের উপস্থিতি দেখা যায় তাদের। একই অবস্থা কমিউনিস্ট পার্টিতে। জেলার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তীর জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির কারণে বরিশালের রাজনীতিতে আলোচনায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। সরকার সমর্থক জাসদ (ইনু) ও বাংলাদেশ জাসদের কমিটি থাকলেও কোনো তৎপরতা নেই। এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলন এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাতে গোনা নেতা-কর্মীদের কালেভাদ্রে দেখা মেলে দলীয় কর্মসূচিতে।

নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীকে প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও অন্তরালে তৎপর তারা। গত কয়েক বছরে এই দলটির ওপর দিয়ে নানা খড়গ গেলেও আড়ালে-আবডালে সক্রিয় তারা।

 

সর্বশেষ খবর