শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ড

ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল চুড়িহাট্টা একতা সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরিবার অংশ নেয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণসহ নানা অভিযোগ নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চুড়িহাট্টা একতা সংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এ মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ছাড়াও অংশ নেন পুরান ঢাকার শতাধিক ব্যক্তি। মানববন্ধনে ভুক্তভোগীদের দাবি ছিল, কেমিক্যালসহ দহ্য পদার্থ নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া, নিহত-আহত প্রত্যেক পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, এসব পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া, হতাহত পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা, রাজউকের নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি সর্বোপরি জনসাধারণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ।

চুড়িহাট্টার আগুনে নিহত বিবি হালিমা শিলার শিশু সন্তানসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ব্যানার। মা মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে বাবা জহিরুল হকসহ পরিবারের সবাই দিশাহারা। পাঁচ বছরের শিশু বিবি মরিয়ম সানিন বলছিল, ‘মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আর আসে না আমি মায়ের কাছে যাব।’ বাবা জহিরুল হক বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের আদর পেতে চায়। কারণ মা বেঁচে থাকতে সবসময় মেয়েকে আদরের মধ্যে রাখত। আরেক মেয়ের বয়স এখন পাঁচ মাস। কী করে বোঝাব আমার কী অবস্থা।’ জহিরুল আরও বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত হালিমার লাশ পাইনি। অন্তত লাশটি পেলে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারতাম। সন্তানরা বড় হয়ে মায়ের কবর দেখতে চাইবে। তখন কী জবাব দেব?’

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত ওয়াসিউদ্দিন মাহিদের বাবা নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ছেলে হারানোর কি সান্ত্বনা হয়? আগুনে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে আমাদের যে আর্থিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছিল তা এখনো পাইনি। সেই সঙ্গে এলাকা এখনো কেমিক্যালমুক্ত হয়নি।’

চুড়িহাট্টা একতা সংঘের সভাপতি আশরাফ উদ্দীন স্বাধীন বলেন, ‘নানা আশ্বাস দেওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে কর্তৃপক্ষের টানবাহানা সত্যিই বেদনাদায়ক।’

পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ‘চুড়িহাট্টায় আগুনে নিহতদের পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে ঘটনায় দোষীদের পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান এসব ভবনের অনুমোদন দিয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে ৭৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আহত হন শতাধিক নারী-পুরুষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর