রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিমানের টিকিট কেলেঙ্কারি

বিনামূল্যে ইস্যু দেখিয়ে লোপাট ১৬ কোটি টাকা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট দুর্নীতি নিয়ে চলছে তোলপাড়। অভিযোগ উঠেছে, আড়াই সহস্রাধিক টিকিট ‘বিনামূল্যে ইস্যু করা হয়েছে’ দেখিয়ে প্রায় ১৬ কোটি টাকা লুট করেছেন বিমানের কয়েকজন কর্মকর্তা। সম্প্রতি তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে আনার পেছনে ছিল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেট জোনের ভূমিকা। মূলত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে আটাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের বিরুদ্ধে  শুরু হয় অনুসন্ধান। তাতেই বেরিয়ে আসে টিকিট     নিয়ে নোংরামির ন্যক্কারজনক চিত্র।

আটাব সিলেট জোনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করা হয় ৬ মার্চ। সেখানে আটাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেটের যাত্রীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। বিমানের যাত্রীর প্রায় ৮০ ভাগই সিলেটের প্রবাসী হলেও তাদের মানসম্মত সেবা দেওয়া দূরে থাক, উল্টো হয়রানি করে আসছে লাল-সবুজের পতাকাবাহী বিমান। বিমানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে সুযোগ করে দিতেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষ সিলেটের যাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্য করছে। সিলেট থেকে ইউরোপ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাতায়াতে বিমানের টিকিট বুকিং করতে গেলে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে গ্রুপ টিকিট দেখিয়ে টিকিট ব্লক করে রাখা হয়। কিন্তু ঢাকা থেকে বেশি দামে টিকিট ঠিকই পাওয়া যায়। বিমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং ১১ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন আটাব সিলেট জোনের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল। পরে গত ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের কাছেও আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে ২০১৮ সালের ৬, ১২ ও ১৩ তারিখে আল গাজী ট্রাভেলসের নামে একটি গ্রুপে ২১ জন যাত্রী এবং তায়রা ট্রাভেলসের নামে ৬০ জন যাত্রী গ্রুপ বুকিং দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ২০ মার্চ বিমানের সিলেট অফিসের সামনে মানববন্ধন করে আটাব। একই দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৮ মো. শামীম আলম অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনার অনুলিপি দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২ এর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও আটাবের সিলেট জোনের সভাপতিকে। সূত্র জানায়, আটাবের এ অব্যাহত আবেদন ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসে সরকারের ওপর মহল। শুরু হয় বিমানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত। তদন্তে দেখা যায়, বিজনেস ও ইকোনমি ক্লাস মিলিয়ে দুই হাজার ৪৭২টি টিকিট বিনামূল্যে ইস্যু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

দুর্নীতির এ চিত্র ধরা পড়ার পর ওএসডি করা হয়েছে বিমানের বিপণন ও বিক্রয় শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আশরাফুল আলম ও উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামকে।

বিমানের অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ায় গত ৩০ মার্চ আটাব সিলেট জোনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে।

এ প্রসঙ্গে আটাব সিলেট জোনের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বলেন, বিমানের অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অনুসন্ধানে টিকিট দুর্নীতির বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে সিলেটের যাত্রীদের ক্ষেত্রে ভাড়া বৈষম্য দূর করা, সিলেট থেকে বিমানের ফ্লাইট বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট চালু করারও দাবি জানান তারা।

সর্বশেষ খবর