চট্টগ্রাম মহানগরের ৪১টি ওয়ার্ডে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্র আছে ১৬ হাজার ৫৯টি। এর মধ্যে লাইসেন্সবিহীনই আছে ১১ হাজার ৪৬২টি! রাস্তার পাশে তামাকজাত পণ্য বিক্রয় কেন্দ্র আছে ৩ হাজার ৩৯৪টি, তামাক বিক্রি হয় এমন চায়ের দোকান ৪ হাজার ৩০টি। তা ছাড়া ৫ হাজার ৮৭৯টি ক্ষুদ্র মুদি দোকান, ৯২৪টি সুপার মার্কেট, ৬৬৭টি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্র, ১৯৬টি রেস্টুরেন্ট ও ৬৯৪টি ভাসমান বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস (বিটা)-এর উদ্যোগে ‘চট্টগ্রাম শহরের তামাক বিক্রয় কেন্দ্রসমূহের তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা গবেষণা’ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য পাওয়া যায়। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের কাছে জরিপের প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর এবং ৬ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর ১ হাজার বিক্রয় কেন্দ্রের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
চসিক মেয়র নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি চসিকের সব শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে কোনো তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা যাবে না। থাকলে সেগুলো অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে। তা ছাড়া ট্রেড লাইসেন্সবিহীন কোনো দোকান থাকলে সেগুলো লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে।’ তিনি বলেন, ‘ধূমপানের কারণেই তরুণরা মাদকের মতো জীবনবিধ্বংসী অভ্যাসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই তামাকজাত সব পণ্য কেনাবেচায় আমাদের সকর্ত থাকতে হবে।’বিটার নির্বাহী পরিচালক শিশির দত্ত বলেন, ‘সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত দেশ করার অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে আইনও আছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তাই আমরা তামাকজাত পণ্যের যত্রতত্র বিক্রি ও ব্যবহারের একটি চিত্র সুনির্দিষ্টভাবে দেখাতে চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তামাকমুক্ত নগর প্রকল্পের টিম লিডার প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘জরিপে ৮৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাকপণ্য বিক্রয় কেন্দ্র ৫ হাজার ৫৩৬টি, ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রি হওয়া হাসপাতাল ১৬২টি, তামাকজাত পণ্য বিক্রিতে নিয়োজিত ১৮ বছরের কম বয়সী ৬৪৬ জন ও বিক্রয়স্থলে দৃশ্যমান বিজ্ঞাপন দেখা গেছে ১২ হাজার ১৬৫টি।’
অভিযোগ আছে, ধূমপানের প্রচারণা, পৃষ্ঠপোষকতা ও বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানছে না কেউ। নগরজুড়ে প্রশাসন, আদালত, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোয় দেদার ধূমপান করা হয়। থাকে বিজ্ঞাপনও। এ নিয়ে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে ধূমপায়ীরা যেখানে সেখানে তা পান করছে। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও ব্যবহার বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
প্রসঙ্গত, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ধারা ৫ মতে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বই, লিফলেট, পোস্টার, ছাপানো কাগজে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধারা লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদ বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদ বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।