রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মামলা না করেই বিরোধ নিষ্পত্তি

আরাফাত মুন্না ও তুহিন হাওলাদার

মামলা না করেই বিরোধ নিষ্পত্তি

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার বাসিন্দা রেহেনা আক্তার। ২০১৩ সালে বিয়ে করেন একই থানার মো. রাসেলকে। সংসার শুরুর কিছুদিন পর থেকেই নানা অজুহাতে স্বামী তার কাছে টাকা চান। প্রথম দফায় রেহেনার বাবা ৫০ হাজার টাকা দিলেও পরে আর দিতে না পারায় তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য শালিসও হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। গর্ভবতী অবস্থায় রেহেনাকে রাসেল ও তার পরিবার মারধর করে পাঠিয়ে দেয় তার বাবার বাড়ি। রেহেনার বাবা যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। টাকার অভাবে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারায় ফৌজদারি মামলাটি খারিজ হয়। এরই মধ্যে রেহেনার কোলজুড়ে আসে এক পুত্রসন্তান। রাসেল ইতিমধ্যে রেহেনাকে তালাকের নোটিস পাঠান। শেষ ভরসা হিসেবে পারিবারিক আদালতে দেনমোহর ও খোরপোষের জন্য মামলা করেন রেহেনা। সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে পৌঁছলে পারিবারিক আদালতের বিচারক মামলাটি আপস নিষ্পত্তির জন্য কুমিল্লার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠান। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মধ্যস্থতায় কয়েক দফা বৈঠকের পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়।

শুধু রেহানা নন, ২০১৫ সালে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালুর পর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬৯১টি বিরোধের ঘটনায় ১৫ হাজার ৮৯৭ জন মানুষ মামলা না করেই বিরোধ নিষ্পত্তি সেবা গ্রহণ করেছেন। আর এ সময়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার ৭০৭ টাকা। জাতীয় লিগ্যাল এইড অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর সেবাটি ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়। গত মার্চ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৭৪টি প্রি-কেইস বিরোধ আসে লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে। এর মধ্যে ১২ হাজার ২৮২টি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ১৪ হাজার ৭৯ জন মানুষ এ সেবা গ্রহণ করেছেন। একই সময়ে পোস্ট-কেইস বিরোধ আসে ১ হাজার ৬০০টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০৯টি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ১ হাজার ১৮ জন মানুষকে সেবা দিয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহারে জোর দিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিচারব্যবস্থায় নতুন মামলার অন্তর্ভুক্তি রোধে বিকল্পভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রচলিত আইনি বিধানাবলি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।  আইনি সেবা পেয়েছে চার লাখ মানুষ : জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জন মানুষ এই সেবা গ্রহণ করেছে। আজ জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস : জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ। সপ্তমবারের মতো দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে এবারের প্রতিবাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শেখ    হাসিনার অবদান, বিনামূল্যে লিগ্যাল এইডে আইনি সেবাদান’। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দিবসটির কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে বেলা আড়াইটা থেকে ধানমন্ডি লেকের পাশে রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চ চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে লিগ্যাল এইড মেলার। জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশের লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতেও উদ্্যাপন করা হবে লিগ্যাল এইড দিবস। ঢাকা জেলা কমিটির সহায়তার ১৮৮০ কারাবন্দীর জামিন : সারা দেশের মতো ঢাকা জেলা লিগ্যাল কমিটিও কাজ করছে গরিবদের আইনি সহায়তা দিতে। গত বছর জানুয়ারি থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সহায়তায় মোট ১ হাজার ৮৮০ জন কারাবন্দী জামিন পেয়েছেন। সারা দেশে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। ঢাকা জেলার কর্মসূচি : লিগ্যাল এইড দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকা জজ আদালত প্রাঙ্গণে লিগ্যাল এইড মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে র‌্যালির পাশাপাশি রক্তদান কর্মসূচিও পালন করবে ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস।

সর্বশেষ খবর