সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতায় বিনিয়োগ বিঘ্নিত রাজশাহী

উঠেছে আকাশ পথ ব্যবহারের দাবি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতায় বিনিয়োগ বিঘ্নিত রাজশাহী

রাজশাহীতে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কাজে আসছে না যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতার কারণে। রেললাইনের সম্প্রসারণ আর নদীপথকে সচল করতে পারলে বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থান- দুটির পথই খুলবে এখানে। আছে আকাশপথ ব্যবহারের দাবি। গত এক দশকে রাজশাহীতে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করলেও উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী যোগাযোগ সুবিধা না পাওয়ায় বিনিয়োগ বাড়ছে না।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বিনিয়োগ না বাড়ার অন্যতম কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে ভারতের সঙ্গে রেলপথের যোগাযোগ স্থাপন হলে এবং পদ্মা নদী খনন করে একটি বন্দর গড়ে তুললে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দুটিই বাড়বে বলে মনে করেন তারা। রাজশাহীর বিসিক শিল্পনগরীতে আটা-ময়দার কারখানা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী ও এমপি শাহরিয়ার আলম। প্রথম বছর ভালো চললেও এখন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নেতারা রাজশাহী এসে ঘুরে গেছেন। রাজশাহীতে অটোকার তৈরির কারখানা স্থাপনে রাজশাহী বিসিকে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি মোটরযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। বিএমজি, কেআরডব্লিউ, জিনওয়া কোম্পানি লিমিটেড ব্যাটারিচালিত অটোকার তৈরি করবে, যা বাংলাদেশের বাজারের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি করা হবে। কিন্তু তিন বছর আগের সেই বিনিয়োগ প্রত্যাশা আজও আলোর মুখ দেখেনি। চীনের একটি কোম্পানিও রাজশাহীতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছিল। তবে নিটল-নিলয় গ্রুপ ও এসিআই গ্রুপ এখানে বিনিয়োগ করেছে। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনেও গেছে। এ ছাড়া এনা গ্রুপ একটি সোয়েটার কারখানা গড়েছে। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে এক হাজার মানুষের। রাজশাহীতে বিনিয়োগে নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নিলেও ব্যাংকের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় পণ্য নিয়ে রাজশাহীর বাইরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে উদ্যোক্তারা রাজশাহীতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন শিল্প-কারখানা গড়তে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দরকার রাজশাহীতে তা নেই। ঢাকা থেকে রাজশাহীর দূরত্ব বিবেচনায় এখানে বড় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ ছাড়া অবকাঠামো ও জ্বালানি ঘাটতি বড় বাধা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর নতুন স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান। কিন্তু তাদের স্বপ্ন হোঁচট খায় লক্ষ্যে পৌঁছার আগে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, ব্যাংক ঋণের সুবিধা না পাওয়া, পরিকল্পনার অভাব ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বিনিয়োগে আসছেন না ব্যবসায়ীরা।

 ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সরকার জানান, রাজশাহীতে শিল্প-কারখানা গড়ে না ওঠার অন্যতম কারণ জ্বালানি সংকট। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় অনেকে এখানে বিনিয়োগে আসছেন না। নগরীতে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার পর উৎপাদন করা পণ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয়। পণ্য পরিবহনের জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু জানান, এ অঞ্চলে বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করতে তারা সরকারের কাছে কিছু প্রণোদনা প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়বে। তবে সংকটের মধ্যেও এখন কিছু কিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। গ্যাস সংযোগের জন্য সরকার ছাড় দিলে সেগুলো আলোর মুখ দেখবে। যারা বিনিয়োগে আগ্রহী তাদের সব ধরনের সহায়তা দিতে চেম্বার অব কমার্স কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিরা বলছেনÑ রেল, নদী ও আকাশপথ ব্যবহার করে বিনিয়োগ বাড়াতে তারা নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, ভারতের সঙ্গে রাজশাহীর যোগাযোগ খুবই সহজ। এখানে পদ্মা নদী খনন করে একটি আন্তর্জাতিক নদী বন্দর গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে ভারত থেকে কাঁচামাল এনে পণ্য উৎপাদন করে সেটি ভারত অথবা অন্য দেশে পাঠানো যেতে পারে। সেই সুবিধা রাজশাহীতে আছে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগটিও আধুনিক করলে বিনিয়োগ বাড়বে।

রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা জানান, বিনিয়োগ বাড়াতে যমুনা নদীর ওপর একটি আলাদা রেল সেতুর দাবি তারা দীর্ঘদিন থেকে জানাচ্ছেন। সেটি করা গেলে বন্দরনগরীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া কার্গো বিমান চালু করা গেলে রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে।

সর্বশেষ খবর