মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মূল্যস্ফীতি ও প্রবাস আয় কমেছে

বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্থে বাজেট বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে বলেছেন, চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ঘোষিত বাজেটের মোট আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেটের এক লাখ ২৭ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা মোট বাজেটের ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ সময় এনবিআর কর রাজস্ব আয় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। মোট সরকারি ব্যয় ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। তবে এ সময় প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি ৪.৬৫ শতাংশ কমেছে এবং সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.০১ শতাংশ বেড়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে গতকাল চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের বাজেটের বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি এসব তথ্য দেন। এ সময় বাজেট ২০১৮-১৯ : দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণসংক্রান্ত প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। এতে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তিনি বলেন, বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমাদের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের অন্যতম কৌশল হবে অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, বহুমুখীকরণের মাধ্যমে গুণগত ও মানসম্পন্ন রপ্তানি পণ্য উৎপাদন, বিদ্যমান বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার অন্বেষণ। প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রা বিনিময় হারসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের সার্বিক অবস্থা সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। বিবিএসের সাময়িক হিসাব উদ্ধৃত করে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এযাবৎকালের রেকর্ড। জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি হতে যাচ্ছে, যা পূর্বের তিন অর্থবছরে ৭ শতাংশের অধিক ছিল। এ ছাড়া মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার।

জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ বিল পাস : সমাজের সুবিধা বঞ্চিত ও দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নে আর্থিক অনুদান এবং সমাজকল্যাণে নিয়োজিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ, অনুদান ও স্বীকৃতি প্রদানের বিধান রেখে ‘জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ বিল, ২০১৯’ পাস করেছে সংসদ।

বাজেট বিশ্লেষণে আরও বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরের সময়ের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে এনবিআর কর রাজস্ব আয় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে মোট সরকারি ব্যয় ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি আয় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, বিগত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানি ঋণপত্র খোলার হার হ্রাস পেয়েছে ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে কমে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের সময়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হ্রাস পাওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গড়ে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। গত অর্থবছরে যা প্রথমার্ধে ছিল ৩.৫০ শতাংশ যা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪.৫১ শতাংশ। এ ছাড়া প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.০৬ শতাংশ। যা গত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১২.৪১ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বিশ্লেষণে বলেন, বর্তমান সরকার একটানা তৃতীয়  মেয়াদের প্রথম অর্থবছর আমরা ব্যাপক প্রত্যাশা ও বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেছি। বছরের প্রথমার্ধে অগ্রগতিতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের গতিপথ সঠিক ধারায় রয়েছে। বিবেচ্য দ্বিতীয় প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চালকসমূহের ইতিবাচক অবস্থা, বিশেষ করে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বেসরকারি ঋণপ্রবাহের ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা এবং মূল্যস্ফীতির নিম্নগতি নির্দেশ করে যে, উন্নয়নের মহাসড়কের কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা সুদৃঢ় হয়েছে।

সর্বশেষ খবর