শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বগুড়া বিএনপির ফাটল আর জোড়া লাগছে না!

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়া বিএনপির ফাটল আর জোড়া লাগছে না!

কী হচ্ছে বগুড়ায় বিএনপির। বগুড়া জেলা বিএনপির পদ, কার্যক্রম, কর্মসূচি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নেতা-কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বয়ে চলছে। দ্বন্দ্ব প্রকাশ না করলেও সাম্প্রতিক সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ঘটনায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে ফাটল ধরেছে তা যেন আর জোড়া লাগতে চাইছে না। এবার বেশ প্রকাশ্যে এলো বগুড়ায় বিএনপির দ্বন্দ্ব। পাল্টাপাল্টি আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিএনপি বড় ঝামেলায় রয়েছে। অন্তর্দ্বন্দ্বের জের ধরে বগুড়া বিএনপি এখন দুই ভাগ। এক ভাগ আহ্বায়ক কমিটির নিচে, অন্য ভাগ প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটির পাশে। লোকে বলাবলি করে, কোন্দলের কারণে বগুড়ার হিরো বিএনপি এখন এগোচ্ছে জিরো হওয়ার দিকে।

জেলা কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে বগুড়া জেলা বিএনপির তিন বছরের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চাঁন সাত বছর পরিচালনা করার পর নতুন কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেন। সে মতে বগুড়া জেলা বিএনপির নেতাদের জেলা কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মতবিনিময় করার জন্য ঢাকায় কেন্দ্রীয় অফিসে ডাক পড়ে। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য জেলার নেতৃবৃন্দ আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং কেন্দ্রের নেতাদের সঙ্গে লবিং শুরু করেন পদ পেতে। একপর্যায়ে গত ২৫ এপ্রিল জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও     কমিটি নিয়ে কথা বলতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তলব করা হয়। সেখানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা উল্লেখ করে বগুড়ার নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ১০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। জেলা বিএনপির একটি গ্রুপ এর প্রতিবাদ জানায়। এ সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দেওয়া নির্দেশনা হিসেবে আখ্যায়িত করলে হট্টগোল হয় ও বাগ্বিত া চলে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে বাগ্বিত ার অভিযোগে অভিযুক্ত হন বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহ মেহেদী হাসান হিমু। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তমতে অসৌজন্যমূলক আচরণের দায়ে তাদের দলীয় পদ এবং সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এ নিয়ে দলের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ২৫ এপ্রিল রাতে তালা লাগিয়ে দেয় একটি গ্রুপ। ২৪ ঘণ্টা পর তালা খুলে দেওয়া হয়। এর আগে সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুর রাফি পান্না, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম, জেলা মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম, যুগ্মসম্পাদক মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেলকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়েও কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। সিনিয়র নেতাদের একরোখা মনোভাবের কারণেই নাকি বহিষ্কার ঘটেছে। একদিকে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই অন্যদিকে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে এখন চলছে জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের জোর গ্রুপিং।

এরপর ২৯ এপ্রিল দুপুরে বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম। সভায় বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় সর্বসম্মতিক্রমে। ওই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট এ কে এম হাফিজুর রহমান, অন্য দুই সদস্য হলেন বিএনপি নেতা অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান বকুল। নির্বচন পরিচালনা কমিটি উপস্থিত সদস্যদের প্রস্তাবে ভিপি সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও জয়নাল আবেদিন চাঁনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক ঘোষণা করে। এ আহ্বায়ক কমিটি ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে।

আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর জানা যায় বিএনপির অন্য একটি অংশ এ আহ্বায়ক কমিটিকে মানতে নারাজ। বিএনপির ওই গ্রুপটি বিকালে বৈঠক করে জেলা বিএনপির ‘প্রস্তাবিত’ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমানকে এবং বিএনপি নেতা ফজলুল বারী তালুকদার বেলালকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ৪৭ সদস্যের নাম প্রস্তাব করা হয়। ২৯ এপ্রিল রাতে সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদারের বগুড়া শহরের রিয়াজ কাজী লেনের বাসভবনে বিএনপির পরামর্শ সভা থেকে আহ্বায়ক কমিটির জন্য নাম ঘোষণা করা হয় বিএনপি নেতা আলী আজগর তালুকদার হেনা, মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, ডা. শাহ মো. শাজাহানের। উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাসহ বেশকিছু নেতা-কর্মী। ২৯ এপ্রিল দুপুরে একটি ও একই দিনে রাতে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে বিএনপির ভিতরের গ্রুপিং এখন প্রকাশ্যে চলে এলো।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হিসেবে বগুড়াকে বিএনপির দুর্গ বলা হলেও এখন আর সেদিন নেই। সংসদীয় ৭টি আসনে বিএনপি জয়ী হলেও এখন জয়ী হয় মাত্র ২টি আসনে। বগুড়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে বিপর্যস্ত বিএনপি এখন মাঠের রাজনীতিতে অনেকটাই কোণঠাসা। এই জোটের জেলা পর্যায় থেকে মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। রাজনীতির মাঠ থেকে তারা এখন অনেক দূরে। কিন্তু কমিটি গঠন হওয়ার আভাস পাওয়ায় তারা দলীয় কার্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক আলী আজগর তালুকদার হেনা জানান, ‘কোনো কমিটি গঠন করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা একটি আহ্বায়ক কমিটির প্রস্তাব করে তা চেয়ারপারসনের কাছে পাঠিয়েছি। কেন্দ্রীয়ভাবে নেতারা এখন সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, ‘দলের সিদ্ধান্তমতে সবাইকে জানিয়ে ও পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে জেলা কার্যালয়ে সাধারণ সভার মধ্য দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেউ যদি নিজের বাসায় বসে কমিটি গঠন করেন তবে সে দায় তার বা তাদের। বিএনপির কমিটি এখন বিদ্যমান। আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদিত হলে জেলা কমিটিও বিলুপ্ত হবে।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর