শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিনা বিচারে বছরের পর বছর বন্দী ৬৭ আসামি

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিনা বিচারে বছরের পর বছর ধরে বন্দী রয়েছেন ৬৭ জন আসামি। হত্যা, চুরি, ডাকাতি এবং ছিনতাই মামলার এসব আসামি সর্বনিম্ন ৫ বছর সর্বোচ্চ ১৬ বছর থেকে বন্দী রয়েছেন। মামলার বিচারকাজে ধীরগতিসহ নানা কারণকে এ জন্য দায়ী করেছেন আইনবিদরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাভোগ করছেন ৬৭ জন আসামি। সর্বোচ্চ ১৬ বছর থেকে সর্বনিম্ন ৫ বছর ধরে তারা কারাগারে বন্দী রয়েছেন। বন্দীদের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ না হওয়ায় বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে বছরের পর বছর ধরে তারা বন্দী হিসেবে আটক রয়েছেন কারাগারে। কারাগারে আটক বন্দীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই হচ্ছে হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন, ডাকাতি মামলার আসামি। একজন রয়েছেন সন্ত্রাসবিরোধী মামলার আসামিও। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারারাগারে ১৬ বছর ধরে বন্দী রয়েছেন ফিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া এলাকার বেলাল হোসেন ওরফে বেলাল। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে। এ পর্যন্ত মামলাগুলোতে সর্বোচ্চ ৬৪ বার থেকে সর্বনিম্ন ৪৮ বার আদালতে হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রত্যেক মামলারই বর্তমানে বিচারকাজ চলমান রয়েছে। ১৬ বছর ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন আরও চারজন। তাদের মধ্যে রয়েছে নাইমুল ইসলাম নাঈম, রতন সিকদার, সত্যজিত পাল এবং মোহাম্মদ এমদাদ। ১৫ বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন চারজন। বাকিরা ১৩ বছর থেকে সর্বনিম্ন ৫ বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন। চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি ইফতেখার সাইমুল বলেন, বিচারকার্য ও প্রশাসনিক কাজের ধীরগতি,  সঠিক সময়ে সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণে কিছু কিছু মামলার বিচার কাজের গতি নেই। তাই বছরের পর বছর ধরে কারাগারে বিনা বিচারে আটক রয়েছেন কিছু আসামি। বিষয়টা দুঃখজনক ও অমানবিক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।  চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী রেজাউল করিম রনি বলেন, এ মামলাগুলোতে আসামি খালাসও পেতে পারেন। যদি মামলায় আসামি খালাস পান তাহলে এত বছরের বন্দীদশার বিষয়টা কি হবে। আসামিকে কীভাবে ক্ষতিটা পুষিয়ে দেবে কর্তৃপক্ষ। একজন ব্যক্তি যত বড় অপরাধই করুক না কেন, বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে তাকে দোষী বলার কোনো সুযোগ নেই। এভাবে তাকে বন্দী করে রাখাও অমানবিক ও ন্যায়বিচারের মধ্যে পড়ে না। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে রাজি নন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কোনো কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, বিচারকার্য শেষ না হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বন্দী রয়েছেন ৬৭ জন আসামি। এটা বন্দীদের জন্য কষ্টের।

মূলত বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মামলাগুলোর বিচারকার্য দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করলেই সবার জন্য তা হবে মঙ্গলজনক।

সর্বশেষ খবর