রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ট্রিপল নাইনে সেবা বাড়াতে থানায় ডেসপাচ সিস্টেম

♦ ১৭ মাসে প্রায় এক কোটি কল
♦ সেবাযোগ্য ছিল ১৮ শতাংশ

আলী আজম

জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের মাধ্যমে পুলিশি সেবা নাগরিকদের দোরগোড়ায় দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দিতে থানায় থানায় ডেসপাচ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে থানা পুলিশের টহল গাড়ি মনিটরিং করতে গাড়িতে যুক্ত করা হয়েছে মোবাইল ডাটা টার্মিনাল (এমডিটি) নামে স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস। ফলে সহজেই জানা যাচ্ছে টহল গাড়ির অবস্থান। এতে করে ৯৯৯-এ সহায়তা চেয়ে ফোন করলে আগের চেয়ে কম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেবা নিশ্চিত করতে পারছে পুলিশ। জাতীয় জরুরি সেবার আওতায় এরই মধ্যে সারা দেশের ছয়টি মহানগর এলাকার ২০০টি থানায় ডেসপাচ সেন্টার চালু করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার সবগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিশেষ এই সেবা। পাশাপাশি গাজীপুর ও রংপুর ছাড়া সারা দেশের মেট্রোপলিটন পুলিশের ৯২টি থানার একটি করে টহল গাড়িকে এমডিটি সেবার আওতায় আনা হয়েছে। সেবা দুটি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ।

৯৯৯ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়েবভিত্তিক প্যানেলের মাধ্যমে ৯৯৯-এর প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে থানার একটি কম্পিউটারে চালু থাকা ডেসপাচ সিস্টেমগুলো। কোনো গ্রাহক সেবা চেয়ে ফোন করে ঘটনার এলাকা ও বিবরণ জানালে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ডেসপাচ সিস্টেমে কল চলে যাবে। কল রিসিভ না করা পর্যন্ত বাজতে থাকবে রিংটোন। এতে করে কল গ্রহণ না করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কম্পিউটারের মনিটরে চলে আসবে। সেখান থেকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। চাইলে সেখান থেকেও এমডিটিযুক্ত পুলিশের টহল গাড়িকে ঘটনাস্থলে পাঠাতে পারবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। কল গ্রহণ করা থেকে অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সময় গণনাও হবে ডেসপাচ সিস্টেমে। ডিজিটাল পদ্ধতিতেই দেওয়া হবে একটি অভিযোগ নম্বর। জানা যাবে তার আপডেটও। তবে সবকিছুতে তৎপর থাকতে হবে থানার কর্মকর্তাদের। এত সব প্রক্রিয়ার কারণে সেবা আরও সহজ হবে, জবাবদিহিও থাকবে অভিযোগের বিষয়ে। পাশাপাশি ট্যাবলেট কম্পিউটারের মতো দেখতে এমডিটি যুক্ত থাকবে জাতীয় জরুরি সেবার প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে এমডিটি ডিভাইসের মাধ্যমে টহল গাড়িকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হচ্ছে। কোনো ঘটনায় পুলিশ পৌঁছাতে দেরি হলে বা কেউ দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তা বোঝা যাবে এমডিটি থেকে। ৯৯৯ কার্যালয় থেকে এসব টহল গাড়িকে সরাসরি নির্দেশনাও দেওয়া যাচ্ছে। এই সেবা চালুর কারণে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে।  ৯৯৯ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর চালু হওয়া সেবাটি জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অপব্যবহারও হচ্ছে। সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত ১৭ মাসে ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৬৮৬টি কল এসেছে। এর মধ্যে ৮৫ হাজার ৫২৩টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, মোট কলের ১৮ শতাংশের বিপরীতে কোনো না কোনোভাবে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছেন। দিচ্ছেন মিথ্যা তথ্যও। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর বিষয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। কখন কল দেবে, কেন দেবে এ বিষয়ে এখনো সচেতনতা আসেনি। উন্নত বিশ্বে ৯৯৯-এ সব সেবাই মেলে। বাংলাদেশে না জেনে অনেকেই ফোন করেন। গেল ১৭ মাসে ৯৯৯-এ ৮২ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর বিষয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এই কার্যক্রমের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। শুধু পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অ্যাম্বুলেন্সই নয়, এর সঙ্গে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসাসহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সামাজিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ সেবাটি ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তথ্যদাতা যিনিই হোন না কেন, তাকে বেশি বিরক্ত করা যাবে না। তার কাছ থেকে তথ্য নিতে হবে। নইলে পরবর্তী সময়ে তিনি তথ্য দিতে বিমুখ হবেন। অন্যরাও আগ্রহ হারাবেন। তথ্য পাওয়া মাত্রই ভুক্তভোগীদের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। তবেই এ সেবা চালু করার কাক্সিক্ষত সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে প্রথমে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ৯৯৯ নম্বরে জাতীয় হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সেখানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলে। ৮ অক্টোবর ৯৯৯ নম্বর পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৬ অক্টোবর থেকে ৯৯৯-এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আবদুল গণি রোডে পুলিশের ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ফায়ার সার্ভিস, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশি সেবা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। মোবাইল ও ল্যান্ডফোন থেকে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি কল করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ এই সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।

সর্বশেষ খবর