বুধবার, ৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
রংপুর সিটি করপোরেশন

স্বাস্থ্যঝুঁকি, সরঞ্জাম ছাড়াই চলে বর্জ্য অপসারণ

শাহজাদা মিয়া আজাদ ও রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

কোনো ধরনের নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার ছাড়াই বর্জ্য অপসারণ করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের চর্ম, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের পাশাপাশি বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলেও সচেতনতার অভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১১০ টন                 বর্জ্য তৈরি হয় নগরীতে। এসব বর্জ্য অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশনের ৬১৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন। দলিত সম্প্রদায়ের বড় অংশ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। হাতে গ্লাভস, পায়ে গামবুট, মাস্ক এবং নির্ধারিত পোশাক পরে কাজ করার কথা থাকলেও তারা খালি হাতেই বর্জ্য অপসারণ করছেন। এ কাজ করতে গিয়ে হাত-পা কেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সর্দি-কাশি, জ্বর, গায়ে ব্যথা, পেটের ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, চর্মরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অনেকেই ভুগছেন। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেশিরভাগই সিটি করপোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত নন। কাজের বিনিময়ে মজুরির ভিত্তিতে এ কাজ করেন তারা।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুমন বলেন, জ্ব্?র, মাথাব্যথা, সর্দি, শ্বাসকষ্ট তো লেগেই থাকে আমাদের। সিটি করপোরেশন থেকে গামবুট ও গ্লাভস দেওয়া হয়েছিল। আমরা দীর্ঘদিন ধরে কোনো নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই আবর্জনা পরিষ্কার করে আসছি। তাই এসব আমাদের লাগে না।

আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আমজাদ হোসেন বলেন, বছরের বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন রোগে ভুগতে হয়। যে কাজ করি সে তুলনায় আমাদের বেতন কম। আগে বেতন ছিল আড়াই হাজার টাকা। এই মেয়র এসে সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতন করে দিয়েছেন। কিন্তু তা দিয়েও সংসার চলে না।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টু বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মেডিকেল বর্জ্যরে পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন। তাদের হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, টিটেনাস, এইচআইভি ভাইরাস, পানিবাহিত রোগ, চর্মরোগ হতে পারে। এ ছাড়া নাক-মুখ সুরক্ষিত না থাকায় নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভিতরে ঢুকছে মারাত্মক সব জীবাণু।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর আঞ্চলিক সমন্বয়ক রাজেশ দে বলেন, তাদের পরিচ্ছন্নতা কাজে নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ব্যবহারে বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত সিটি করপোরেশনের।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, শতভাগ পরিচ্ছন্নতাকর্মী যেন নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করেই বর্জ্য অপসারণ করেন সেদিকে সিটি করপোরেশনের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। যেহেতু নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করার অভ্যাস দীর্ঘদিনের, তাই তাদের তা ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে একটু সময় লাগবে।

সর্বশেষ খবর