বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

হালদায় মাছের ডিম সংগ্রহের অপেক্ষা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হালদায় মাছের ডিম সংগ্রহের অপেক্ষা

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় রয়েছেন সংগ্রহকারীরা। শনিবার রাতে এবং গতকাল ভোরে কয়েকটি মা মাছ ডিম ছাড়ায় সংগ্রহকারীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তবে অতীতের মতো এখনো আশানুরূপ ডিম না ছাড়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। জানা যায়, হালদা নদীতে সাধারণত এপ্রিল-জুন (চৈত্র-বৈশাখ) মাসে রুই, কাতলা, কালবাওস, মৃগেল ও কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। কার্যত পূর্ণিমা-আমাবস্যার সময়ে আকাশের প্রবল গর্জন, পাহাড়ি ঢল, ভারী বর্ষণেই হালদা নদীর মা-মাছ ডিম ছাড়ে। শনিবার চট্টগ্রামে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছে। ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘গড়দুয়ারা থেকে মদুনাঘাট এলাকা পর্যন্ত কয়েকটা মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। তাই আমরা ছয় শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছি। প্রতি নৌকায় রয়েছেন দুজন করে সংগ্রহকারী। ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, মিহি সুতার জাল, বিভিন্ন আকারের পাত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত আছেন।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদায় ডিম ছাড়ার সবগুলো উপসর্গ বর্তমানে আছে। গতকাল কয়েকটি মা মাছ ডিম ছেড়েছে, তবে তা অপ্রতুল। মেঘের গর্জন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, ভারি বর্ষণসহ প্রাকৃতিক এসব উপসর্গ থাকলে ডিম ছাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘এবার হালদায় ডিম নিয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীনের উদ্যোগে হালদা নদীতে অভিযান চালিয়ে কারেন্ট জাল জব্দ, জরিমানা ও ডিম ফুটানোর জন্য ৩০টি কূপ তৈরিসহ নানা কারণে এবার হালদার ডিম প্রাপ্তিতে পরিবর্তন আসতে পারে।’ হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘ডিম সংগ্রহকারীরা কয়েকটি এলাকায় সামান্য ডিম পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আশা করি প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল থাকলে নমুনা ডিম ছাড়বে।

ডিম থেকে রেণু তৈরির সব প্রস্তুতি আছে। তা ছাড়া কেউ যাতে মা-মাছ শিকার করতে না পারেন সেদিকেও কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, ‘ডিম ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে নদীতে মা-মাছের আনাগোনা বেড়েছে। বিষয়টি আমরা নজরদারিতে রেখেছি। সংগ্রহকারীরাও প্রস্তুত। একই সঙ্গে হাটহাজারী ও রাউজানের হ্যাচারিগুলোও সংস্কার করা হয়েছে।’

 

হালদা নদীর ডিম সংগ্রহকারীরা বলেন, হাটহাজারীতে চারটি এবং রাউজানে তিনটি হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নদীতে মা মাছ ছাড়ার পর আমরা সেগুলো হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করি। হ্যাচারিতে আধুনিক পদ্ধতিতে চার থেকে পাঁচ দিন পরিচর্যার পর ডিম থেকে রেণু এবং ২০ থেকে ২৫ দিন পর রেণু থেকে পোনা ফুটানো হয়। এর পর ডিম সংগ্রহকারীরা পোনাগুলোকে ধানী পোনা, আঙ্গুলি পোনাসহ বিভিন্ন সাইজ ও নামে বিক্রি করেন। হালদা নদীর পোনা সারা দেশেই সরবরাহ করা হয় বলে জানান সংগ্রহকারীরা।

সর্বশেষ খবর