শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোও লাভজনক হতে পারে

সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনা ক্রিসেন্ট জুট মিল লিমিটেডের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৩৫০ কোটি টাকা। মিলে উৎপাদিত ১ কোটি টাকার পাটপণ্য বিক্রি হলে ২০ শতাংশ হারে ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয় ২০ লাখ টাকা। একই সঙ্গে অসময়ে উচ্চমূল্যে কাঁচা পাট কেনায় যেমন পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে তেমনি উৎপাদিত পণ্য অবিক্রীত থাকায় হচ্ছে লোকসান। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অব্যবস্থাপনা, মাথা ভারী প্রশাসন ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পাটকলে লোকসানের বড় কারণ। এদিকে পাটকলগুলোকে লাভজনক করতে জাতীয় বাজেটে পাট খাতে বরাদ্দ রাখা, দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ গঠন, সময়মতো কাঁচা পাট কেনা ও ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ জানিয়েছেন পাটকল শ্রমিক নেতারা। জানা যায়, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে শ্রমিকদের ৮ থেকে ১১ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। পাটকলগুলোয় বর্তমানে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার উৎপাদিত পাটজাত পণ্য অবিক্রীত রয়েছে। পাটকল শ্রমিক লীগ খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন জানিয়েছেন, ঢাকায় বিজেএমসির সঙ্গে পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ-ননসিবিএ পরিষদের বৈঠকে সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো হলোÑ জাতীয় বাজেটে পাট খাতে বরাদ্দ রাখা, সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বেতন-মজুরি, গ্রাচ্যুইটি প্রদান, দক্ষ জনবল দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন, বিজেএমসির সম্পদের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, পাট মৌসুমে বাজার থেকে মানসম্মত কাঁচা পাট কেনা ও ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট, ২০১০-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, কৃষিপণ্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা (২০ শতাংশ সাবসিডি) বাস্তবায়ন, ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে কর্মরতদের সুযোগসহকারে পাওনা দিয়ে অবসর ও প্রয়োজনে শ্রম আইনের ২৮ (৪) ধারা মোতাবেক দক্ষ শ্রমিককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া এবং পর্যায়ক্রমে মিলগুলোকে বিএমআরই করা।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক গাজী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শুধু মৌসুমে কাঁচা পাট কিনতে পারলে পাটকলগুলোয় ৩০০ কোটি টাকার লোকসান কমানো যায়। প্রতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন কাঁচা পাট কিনতে হয়। মৌসুমে মণপ্রতি কাঁচা পাটের দাম থাকে ১২০০-১৫০০ টাকা। কিন্তু পাটকলে বরাদ্দ না থাকায় অসময়ে এ কাঁচা পাট ২ হাজার টাকা মণ দরে কিনতে হয়।’

ইস্টার্ন জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য পাটকলে লোকসান হয় না। বরং যাদের পাটকল সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই, তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে লোকসান বাড়ে।’

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি পাটকলে বেতন-মজুরি ও অন্যান্য ব্যয় বেশি হওয়ায় পণ্যের উৎপাদনব্যয় বাড়ে। এ ক্ষেত্রে মিলগুলোকে লাভজনক করতে হলে সরকারি ভর্তুকি ও বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর