শিরোনাম
রবিবার, ১২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাসি সিরায় মিষ্টি, ময়লা সেমাই

৩৫ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পরিচালিত ভেজালবিরোধী অভিযানে দেখা গেছে, মিষ্টি তৈরি কারখানায় চার-পাঁচ দিনের বাসি সিরায় বারবার তৈরি হচ্ছে মিষ্টি। মিষ্টির সঙ্গে থাকছে মাছি। এসব মিষ্টিই পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের খাবার টেবিলে। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি সেমাই সরবরাহ করা হচ্ছে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের মোড়কে। গতকাল রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানায় অভিযান চালাতে গিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর টিম এ চিত্র পেয়েছে। এ ছাড়া টিম অভিযান চালানোর সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এর মধ্যে নামি প্রতিষ্ঠান প্রিন্স বাজার, জিমার্টও রয়েছে।

আগারগাঁও তালতলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। এ সময় ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কামরাঙ্গীরচর, পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী পরিচালক আতিয়া সুলতানা ও আফরোজা রহমান। এ সময় ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে হাবিবা ফুড প্রোডাক্টস এবং মদিনা বেকারিকে ১ লাখ টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। শান্ত ফুড সেমাইকে ৭০ হাজার টাকা, কেল্লাফতে রেস্টুরেন্টকে ৩০ হাজার টাকা, সূর্য ফুল সুইটমিটকে ২০ হাজার টাকা, নবাবী ভোজকে ৫ হাজার টাকা, পোপেস রেস্টুরেন্টকে ১৫ হাজার টাকা, কেল্লা কাবাব অ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টকে ৫ হাজার টাকা, পারভীন রেস্টুরেন্টকে ৫ হাজার টাকা, বিউটি লাচ্ছি অ্যান্ড ফালুদাকে ২ হাজার টাকা, বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরকে ২ হাজার টাকা, কাবাব ফোরকে ২ হাজার টাকা এবং রানা স্টোরকে ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগে মদিনা মিষ্টান্ন ভা ারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আতিয়া সুলতানা জানান, দেখা গেছে মিষ্টি বানানোর জন্য সিরা বাসি হয়ে গেলেও তা বারবারই ব্যবহার করা হচ্ছে। এই খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এ ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে ক্যান্সার হয়। সেমাই তৈরির কারখানায় দেখা গেছে, সবকিছু মেঝেতে খোলা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। সেমাই ভাজা হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন চুলায়। ফলে ময়লা মিশে যাচ্ছে সেমাইয়ের সঙ্গে। পরবর্তীতে এসব সেমাই-ই ভরা হচ্ছে নামিদামি কোম্পানির মোড়কে। অপর সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিন জানান, একই পণ্য বিভিন্ন নামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে- যা আইনত অপরাধ।

 জরিমানা : এদিকে কৃষি বিপণন অধিদফতরের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে পিয়াজ বিক্রির অভিযোগে চেইন সুপার শপ প্রিন্স বাজার ও জিমার্টকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে এ সংস্থা।

 রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় গতকাল রমজানের বিশেষ এ অভিযানে প্রতিষ্ঠান দুটিকে এ জরিমানা করা হয়। একই অভিযানে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি ও মূল্য তালিকা না থাকায় মিরপুর-১ এর চার মাংসের দোকানকে মোট ৩০ হাজার জরিমানা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার ম ল।

জরিমানা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মূল্য তালিকা না থাকায় আনোয়ারের মাংসের দোকানকে ১০ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে খোকনের মাংসের দোকানকে ৫ হাজার টাকা, ভট্টুর মাংসের দোকানকে ৫ হাজার টাকা এবং মায়ের দোয়া মাংসের দোকানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আবদুল জব্বার ম ল বলেন, রাজধানীতে দেশি পিয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা এবং আমদানি পিয়াজ ২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর থেকে বেশি দামে বিক্রি করা ভোক্তা আইন পরিপন্থী।

পচা খেজুর : র‌্যাবের অভিযানে জব্দ করা ৪০০ টনের বেশি পচা খেজুর গতকাল ঢাকার মাতুয়াইলের ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার বস্তা পচা খেজুর কয়েকটি ট্রাকে ভরে সারিবদ্ধভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও পুরান ঢাকার বাদামতলী থেকে এসব খেজুর জব্দ করা হয়। এসব অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে সারওয়ার আলম।

গত ২৯ এপ্রিল ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে শাহিন অ্যান্ড ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজ ও আদর্শ কোল্ড স্টোরেজ নামে দুটি কোল্ড স্টোরেজে (হিমাগার) অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪১০ টন পচা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব খেজুর নতুন প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগে শাহিন কোল্ড স্টোরেজের মালিককে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গত ৭ মে বাদামতলী থেকে ২২ টন পচা-মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করা হয়। বিএসটিআই ও র‌্যাব-৩ এর সহযোগিতায় খেজুরের আড়তে অভিযান চালিয়ে এসব পচা খেজুর জব্দ করা হয়।

সর্বশেষ খবর