পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরের ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সেই চাপ সামাল দিতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগর থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার সংযোগ চ্যানেলের ড্রাফট (গভীরতা) বাড়াতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়ে চলমান রয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে তিন হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে মোংলা বন্দর। জানা যায়, মোংলা বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জেটি নির্মাণের ১১টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। বন্দরের পাঁচটি জেটির কার্যক্ষমতার ৭০-৮০ শতাংশ বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামী দিনের চাপের কথা চিন্তা করে আরও ৯টি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চীনের অর্থায়নে দুটি, ভারতের অর্থায়নে তিনটি, সরকারি অর্থায়নে দুটি ও সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থায়নে আরও দুটি জেটি নির্মাণ করা হবে। বড় ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে জেটি পর্যন্ত চ্যানেলের নাব্যতা বাড়াতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং চলছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছাকাছি সমুদ্রবন্দরের স্থানটি দখল করবে মোংলা বন্দর। তখন এই বন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি খরচ অনেকগুণ কমে যাবে। সংগত কারণেই আমদানি ও রপ্তানিকারকরা অর্থ সাশ্রয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। তখনকার চাপ সামলানোর জন্যই নানামুখী প্রস্তুতি চলছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নাব্যতা সংরক্ষণে মোংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত চ্যানেলে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৩৭ দশমিক ৭১ লাখ ঘন মিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া পশুর চ্যানেলে ১০ দশমিক ৫ ড্রাফটের বড় জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ফুড সাইলো ও আউটার বারে ড্রেজিংয়ের কাজ অব্যাহত রয়েছে। বন্দরের জন্য সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ভারী ইকুইপমেন্ট, মোবাইল হারবার ক্রেন, কনটেইনার ট্রেইলার, টার্মিনাল ট্রাক্টর, বিচ ট্রাক, টাগবোট সংগ্রহ ও রুজভেল্ট জেটির অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়বে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে মোংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত চ্যানেলে প্রকল্পের আওতায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজের অগ্রগতি ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বাকি ৩১ দশমিক ৭১ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিংয়ের জন্য ১৫১ কোটি টাকা এডিপিতে বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা চলতি বছরের শেষ নাগাদ বন্দরের হ্যান্ডলিংয়ের কাজে যুক্ত হবে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে মোংলা বন্দরের উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেয়।
পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পগুলোর কাজ এখন চলছে। বিগত দিনে বন্দরের কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টের কথা চিন্তাই করা হয়নি। বর্তমান সরকারের সময়েই ২২টি আধুনিক কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট কেনা হয়েছে, যা দিয়ে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বন্দরের পাঁচটি জেটিতে যে পরিমাণ জাহাজ আসবে তা স্বাচ্ছন্দ্যে হ্যান্ডলিং করা যাবে।
জানা যায়, ‘ভিশন-২০২১’ সামনে রেখে বন্দরের উন্নয়নে চীনের সঙ্গে তিন হাজার কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণের পাশাপাশি দুটি ইয়ার্ড নির্মাণ, বহুতলবিশিষ্ট গাড়ি রাখার মাল্টিস্টোরেজ কার পার্ক নির্মাণ, ১১টি সার্ভে ও টাগবোট ক্রয়, কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়, চার লেনের সড়ক উন্নয়নসহ আটটি কম্পোনেন্ট নির্মাণ করা হবে।