শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

সেই স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে রাজশাহীর মোহনপুরের সুমাইয়া আক্তার বর্ষা (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিলপাড়া গ্রামে নিজ শয়নকক্ষে বর্ষা গলায় ফাঁস দেয়।

বর্ষা উপজেলার বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ২৩ এপ্রিল বর্ষাকে তার বান্ধবীর মাধ্যমে শহরে নিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায় মুকুল নামে এক যুবক। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা না নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার মাধ্যমে সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ছাড়া মুকুল  ও তার সহযোগীদের আটক করলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। বিচার না পেয়ে ও থানায় মামলা করতে না পেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা। সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
 এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ। বর্ষাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করায় ফের গ্রেফতার করা হয় মুকুল, সোনিয়া ও নাঈমকে। গতকাল তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ছাত্রীর পরিবার ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের আবদুল মান্নান চাঁদের মেয়ে বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আকতার বর্ষা গত ২৩ এপ্রিল বাড়ি থেকে প্রতিবেশী শরিফুল ইসলামের মেয়ে সহপাঠী সোনিয়ার সঙ্গে প্রাইভেট পড়তে যায়। যাওয়া- আসার পথে এলাকার কাজলের ছেলে মুকুল (১৮) তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে বর্ষার বান্ধবী সোনিয়ার মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বর্ষার পিতা আবদুল মান্নান জানান, ২৩ এপ্রিল প্রাইভেট শেষে বান্ধবী সোনিয়ার সহযোগিতায় মুকুল বর্ষাকে অপহরণ করে প্রথমে শহরে নিয়ে যায়। সেখানে তার শ্লীলতাহানি ঘটায়। এরপর আবার মোহনপুরের খানপুর বাগবাজার এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে অচেতন হয়ে পড়ে বর্ষা। তখন লোকজন তাকে উদ্ধার করে। তবে লোকজনের কাছ থেকে মুকুল তাকে (বর্ষা) আবারও শহরে নিয়ে যেতে চায়। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন বর্ষাকে বাগবাজার থেকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে প্রথমে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ২৪ এপ্রিল মুকুলকে আটক করে। তবে ওইদিন রাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই দিন আটক করা হয় মুকুলের সহযোগী শিবপুর গ্রামের শফিকের ছেলে নাঈমকে। তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
আবদুল মান্নান জানান, তার মেয়েকে সোনিয়ার মাধ্যমে অপহরণ করে শহরে নিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায় মুকুল। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। আপসের কথা বলে আসামিদের আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে। এতেই ক্ষোভে-অভিমানে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বর্ষাকে আজ মরতে হতো না।
এ ব্যাপারে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন বলেন, ধর্ষণ হয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে লাশের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। আপাতত আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে তিনজনের নামে মামলা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর