শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজধানীতে আবার বৃত্তাকার নৌপথ চালুর উদ্যোগ

বার বার মুখ থুবড়ে পড়া প্রকল্প এবার থাইল্যান্ডের আদলে

মোস্তফা কাজল

বদলে যাচ্ছে রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথ। এবার হচ্ছে থাইল্যান্ডের আদলে যাত্রীবান্ধব। ফলে এ প্রকল্পে আবারও তৎপর হচ্ছে সরকার। আগের লাভ-লোকসান ভুলে নতুনভাবে নেওয়া উদ্যোগে থাকছে নানা ধরনের চমক। পরিকল্পনাতে এবার যুক্ত করা হচ্ছে, টেকসই ও দ্রুতগতির ওয়াটার বাস। আকার হবে ছোট। আধুনিক ওয়াই-ফাই থাকবে এ সার্ভিসে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কাঠামো হবে আধুনিক ও যাত্রীবান্ধব। এ সার্ভিসের মূল লক্ষ্য হবে অল্প সময়ে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) বলছে, এবার রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথ থাইল্যান্ডের আদলে নিরাপদ ও যাত্রীবান্ধব হচ্ছে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মুখ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে সচেষ্ট রাখা বিআইডব্লিউটিসিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনকল্যাণে  বিভিন্ন সময়ে সরকারের নেওয়া বিশেষ প্রকল্প। কিছুদিন না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। সরকারের নেওয়া উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম একটা প্রকল্প ছিল ঢাকার ওয়াটার বাস সার্ভিস। এ সার্ভিস শুরুর পর থেকে নানা অব্যবস্থাপনা, সঠিক পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এবার নৌপথে যাত্রা শুরুর পর যাতে ব্যর্থ না হতে হয়, সেজন্য সতর্ক থাকবে বিআইডব্লিউটিসি। জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান প্রণয় কান্তি বিশ্বাস বলেন, রাজধানী ঢাকার আয়তন কম। কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। এ কারণেই আমরা থাইল্যান্ডের আদলে এবার এ সার্ভিসকে ঢেলে সাজাব। আগের ব্যর্থতা খতিয়ে দেখে আবারও ব্যস্ত রাজধানীর মানুষের গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছে দিতে সদরঘাট টু গাবতলী হয়ে আশুলিয়া পর্যন্ত একটি এবং সদরঘাট-নারায়ণগঞ্জ-টঙ্গী পর্যন্ত আরেকটি রুটে বৃত্তাকার নৌপথকে সচল করতে নতুন করে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শুরুতে এই বৃত্তাকার নৌপথ চালু করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল বাসগুলো বড় হবে। এতে অনেক যাত্রী একসঙ্গে পরিবহন করা যাবে। এতে লাভবান হবে সরকার। তবে যাত্রীদের সেবা দিতে গিয়ে বেশির ভাগ প্রকল্পে লোকসান হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকার নৌপথ পুরনো অবয়বে ফিরিয়ে আনা হবে। নদী তীরের দখল ও দূষণ রোধ করে নদীর সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। নৌপরিবহন ব্যবস্থাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিসির তথ্যমতে, ঢাকার সদরঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদী ও তুরাগ নদ দিয়ে চলাচলের জন্য ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করে সরকার। তিন মাস চলার পর বন্ধ হয়ে যায় এ সার্ভিস।

 ‘তুরাগ’ ও ‘বুড়িগঙ্গা’ ওয়াটার বাস দুটি নির্মাণে সরকারের খরচ হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। কিন্তু সময়ক্ষেপণ আর চেষ্টার পর আবারও যে ওয়াটার বাস চালু হলো, ১১ মাস যেতে না যেতেই তা মুখ থুবড়ে পড়ে ২০১১ সালের ১০ জুন। পরে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও চারটি ওয়াটার বাস চলাচল শুরু করে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই। তখন বছর যেতে না যেতেই বিকল হয়ে যায় এসব ওয়াটার বাস। পরে দৈনিক ৪০ হাজার টাকা লোকসান দেখিয়ে ওয়াটার বাস সার্ভিসটি ছেড়ে দেওয়া হয় বেসরকারি মালিকানায়। কিন্তু তারাও লোকসানের কারণে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। এরপর বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও সার্ভিসটি চালু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন। সর্বশেষ অব্যাহত লোকসানের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর ছয়টি ওয়াটার বাস নামায় বিআইডব্লিউটিসি। ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এ নৌযানগুলো নির্মাণ করে হাইস্পিড শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। বর্তমানে সার্ভিসটি আবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি মালিকানায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার এ নদীপথ সচল রাখা গেলে রাজধানীর সড়কে চাপ কমত। পুরনো জট ও জটিলতা ভুলে আবার নতুন উদ্যমে ওয়াটার বাস নামাতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। যাত্রীবান্ধব করতে ফিরিয়ে আনা হবে বৃত্তাকার নৌপথকে। বর্তমানে নদীর দখল ও দূষণ থেকে নদীগুলোকে রক্ষার্থে চলানো হয়েছে অভিযান। এক্ষেত্রে সফলও হয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর