বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজস্ব আয় কমেছে ১৪ খাতে

কর্মকর্তাদের কঠোর মনোভাবকে দায়ী করছে এনবিআর

রুহুল আমিন রাসেল

শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ১৪ খাতে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পর্যালোচনা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের কঠোর মনোভাবের কারণে রাজস্ব আদায়ে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য যাতে খালাস না হয়, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশনা কর্মকর্তাদের দিয়েছে এনবিআর।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সর্বশেষ শুল্ক ও ভ্যাট আদায় অগ্রগতি ও পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৩ মে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্ব আদায় কার্যক্রম সন্তোষজনক হওয়া আবশ্যক। এর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেদনে ১৬টি খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করা হলেও ১৪টি খাতেই প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। এ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে-

ব্যাংকের আমানত : এ খাতে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও মার্চে কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। আমানতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।

ব্যাংক ও বীমা : এ খাতে ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে প্রবৃদ্ধি কমেছে। ব্যাংক ও বীমা খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছে না এনবিআর। এর পরও রাজস্ব কমে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে সব ভ্যাট কমিশনারেটে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ফ্লোর স্পেস : বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে সঠিকভাবে চুক্তি হয় কি না, সেখানে কী ব্যবসা হয়, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। এ খাতে রাজস্ব আদায়ে ভ্যাট কমিশনারেটগুলো পিছিয়ে আছে। কমিশনাররা চেষ্টা করলে আয় বাড়বে। এর আগে এ খাতের রাজস্ব আদায়ে যেসব নির্দেশনা এনবিআর দিয়েছে, সে অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি হয়নি। গত মার্চ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ।

লোকাল ট্রেড ভ্যাট : রাজস্ব বৃদ্ধির অনেক সুযোগ আছে। এ খাতে নিয়মিত প্রতি মাসের তথ্য দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের কেনাকাটায় নজরদারি বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বড় বড় মার্কেটে ও দোকানে ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা বসিয়ে সেলস ভেরিফিকেশন করতে নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটি বলেছে, অর্থবছরের শেষ সময়ে প্যাকেজ ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে হবে। ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন : এ খাতের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ নয়। ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ খাতে নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে সব ভ্যাট কমিশনারেটকে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। মেডিসিন : এ খাতে গত মার্চ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে রাজস্ব কম আদায় হওয়ার কারণ সব ভ্যাট কমিশনারেটকে খতিয়ে দেখতে বলেছে এনবিআর। ইটভাটা : ইটের মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও এ খাতে যথাযথ রাজস্ব পায়নি সরকার। এ তথ্য থেকেই বোঝা যায়, ইটভাটা খাতে কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনিটরিং দুর্বল। জোগানদার : এ খাতে এনবিআরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ভ্যাট কমিশনারেটদের এনবিআরের নির্দেশনা মেনে কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এয়ারলাইনসের টিকিট ট্যাক্স : এ খাতেও প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ ক্ষেত্রে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেট খুবই খারাপ অবস্থানে রয়েছে। যদিও যাত্রী চলাচল কমে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছে না এনবিআর। এ ক্ষেত্রে কোনো এয়ারলাইনসের কারণে রাজস্ব আয় কমেছে তা অনুসন্ধানের নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। চা খাত : এ বছর চায়ের বাজার ভালো। এমনকি গত বছরের তুলনায় বেচাকেনাও বেশি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এ বছর প্রবৃদ্ধি কমেছে। চায়ের প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় এ বছর বাড়াতে বলেছে এনবিআর।

বেভারেজ : প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকার পরও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে রাজস্ব আয় কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সেখানে মার্চে হয়েছে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে কুমিল্লায়। বিড়ি : এ খাতে রাজস্ব আয়ের প্রকৃত প্রতিফলন নেই। ফলে রংপুর, যশোর, খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা উত্তরে বিড়ি খাতের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ খাতে অর্থবছরের শুরুতে কিছু কৌশল গ্রহণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনাররা তা আমলে নেননি। নির্মাণ সংস্থা : এ খাতে গত অর্থবছর ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। তুলনামূলক কম রাজস্ব আদায় হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজস্ব আয় নিশ্চিত করার নির্দেশনা সব ভ্যাট কমিশনারেটকে দিয়েছে এনবিআর। পল প্রোডাক্ট : এ খাতে মার্চ পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ খাতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করার নির্দেশনা চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটকে দিয়েছে এনবিআর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর