শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিলুপ্ত বানর-চিতা বাঘ ভালো নেই অন্যরাও

বাইজিদ ইমন, চবি

বিলুপ্ত বানর-চিতা বাঘ ভালো নেই অন্যরাও

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহাড়ি ভূমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে পাহাড়। সেখানে চাষ করা হচ্ছে আদা ও অন্যান্য শাক-সবজি। নির্বিচারে কাটা হচ্ছে নানা প্রজাতির গাছ। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে বানর-চিতা বাঘ। আবাসন হারাচ্ছে হরিণ এবং সাপও। গত কয়েক দিনে পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে এসেছে প্রায় অর্ধশতাধিক সাপ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অতি শিগগিরই পাহাড় নিধন বন্ধ না হলে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য। জানা যায়, ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড়ে তিন প্রজাতির বানর, চিতা বাঘ, বন্যকুকুর, উল্লুক ও হনুমানের দেখা মিলত। কিন্তু এখন এসব প্রাণীর দেখা মেলে না পাহাড়ে। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে প্রচুর হরিণের দেখা মিলত। এখন হরিণও বিলুপ্তির পথে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত  জরিপের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ প্রজাতির প্রাণীর কথা উল্লেখ থাকলেও এখন ১৫ প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। বাকি ১২ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত। পাহাড়ি ভূমির পরিমাণ কমে যাওয়াকে এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে ৫০ প্রজাতির ব্যাঙের মধ্যে প্রায় ২৫ প্রজাতিই পাওয়া যায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৫ সালে চবি ক্যাম্পাসে পাখি ছিল ৭৯ প্রজাতির। বর্তমানে পাখি রয়েছে ২১৫ প্রজাতির। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালের হিসাবে ক্যাম্পাসে বৃক্ষ ছিল ৫৯ প্রজাতির, যা বর্তমানে বেড়ে ২৫২ প্রজাতিতে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে তিন প্রজাতির বানর, চিতা বাঘ, গোরখুদিনী, বন্যকুকুর, উল্লুক, হনুমানসহ আরও কিছু প্রাণী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো হরিণের সংখ্যাও কমেছে ব্যাপক হারে। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ক্যাম্পাসে পাখির অবস্থান ও সংখ্যা অনুসন্ধানে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে এ পর্যন্ত চারটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত ও অধ্যাপক বেনজির আহমেদ চট্টগ্রাম বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক  মোখলেসুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাখির ওপর জরিপ চালান। এতে ক্যাম্পাসে বসবাসকারী ৭৯ প্রজাতির পাখি রেকর্ড করা হয়।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ আহসান ও বিভাগটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে পাখিদের ওপর চালানো জরিপের ফল প্রকাশিত হয় ভারতের থ্রেটেন্ড ট্রেক্সা জার্নালে। এ জরিপে উল্লেখ করা হয়, ক্যাম্পাসে ৬২টি গোত্রের মোট ২১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। ২১৫ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১০৮টি গায়ক ও ১০৭টি অগায়ক পাখি রয়েছে। পাখিগুলোর মধ্যে ১৬০টি প্রজাতির পাখির স্থায়ী নিবাসই চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ৫১টি অতিথি পাখি হিসেবে মৌসুমে ক্যাম্পাসে আসে আবার চলে যায়। চারটি প্রজাতির পাখি রয়েছে যারা মাঝে-মধ্যেই আসে। এ ছাড়াও পাহাড়ি ভূমি রক্ষা ও বৃক্ষরোপণ এবং পশুপাখিদের আবাসন রক্ষা করতে না পারলে এসব প্রাণীও বিলুপ্তির সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর