রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার আরিফের ভরসা মোমেন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

এবার আরিফের ভরসা মোমেন

একান্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিসিক মেয়র

সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) আরিফুল হক চৌধুরী যখন প্রথম মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন, তখন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। রাজনৈতিকভাবে তারা দুই মেরুর হলেও সিলেট নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে সেই মতপার্থক্য ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন দুজন মিলে।

মুহিত টানা দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে আরিফও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন গত বছরের আগস্টে। পরবর্তী সময়ে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মুহিত অংশ নেননি। তবে তারই ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন সিলেট-১ আসনে নির্বাচিত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যেতে এখন আরিফের ভরসা হয়ে উঠেছেন মোমেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়র আরিফের মাথায় ছিল অর্থমন্ত্রী মুহিতের ‘স্নেহের ছায়া’। সিলেট নগরীর উন্নয়নে আরিফকে দিয়ে কাজ করাতে আগ্রহের কমতি ছিল না মুহিতের। নিজে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় অর্থ বরাদ্দ দিতেও কার্পণ্য করেননি তিনি। মুহিতের সময়েই সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রায় ২৩৭ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়।

মুহিতের সহযোগিতায় নগরীর উন্নয়নে দৃশ্যমান নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন আরিফ। ফলে প্রতিকূল পরিবেশেও আরিফ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন। এদিকে সরকারের গত মেয়াদে অর্থমন্ত্রী ছিলেন সিলেটের আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সুনামগঞ্জের এম এ মান্নান। অর্থাৎ অর্থ মন্ত্রণালয়ে ছিল সিলেটীদের আধিপত্য। কিন্তু এবার মুহিত সংসদ বা মন্ত্রণালয়ে নেই, মান্নান স্থান পেয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে। এর ফলে আগে যেভাবে অর্থ বরাদ্দ পেতেন আরিফ, এবার আর তা হচ্ছে না।

এমনকি মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে যেসব অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গিয়েছিলেন, বর্তমানে সেই অর্থ ছাড়াতেও বেগ পেতে হচ্ছে আরিফকে। এর ফলে সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজ নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন তিনি। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না               পাওয়ায় ওয়ার্ড পর্যায়ে উন্নয়ন কাজের জন্য কাউন্সিলরদের চাহিদামাফিক অর্থও দিতে পারছেন না মেয়র। এমন অবস্থায় সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজ যাতে স্থবির না হয়, পুরনো বরাদ্দকৃত অর্থের ছাড় যাতে মেলে এবং নতুন করে যাতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়, সে জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের দ্বারস্থ হয়েছেন মেয়র আরিফ। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট সফরে এলে তার বাসায় যান আরিফ। সেখানে সিলেট নগরীর উন্নয়নের বিভিন্ন দিক এবং অর্থ সমস্যার বিষয়টি মন্ত্রীকে অবহিত করেন মেয়র। সব শুনে এসব বিষয় নিয়ে বড় পরিসরে বসার আগ্রহ দেখান মোমেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সিসিক। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মেয়রের সভাপতিত্বে সভায় সব ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। সভায় নতুন করে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া এবং আগে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় পেতে সমস্যার কথা তুলে ধরেন আরিফ। অর্থের অভাবে সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজে স্থবিরতার শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি মোমেনের সহযোগিতা চান। এ পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘সিসিকের বর্তমান অবস্থা অবগত হয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আশ্বাসও দেন মোমেন। বিশ্লেষকদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ অনুসারে, আরিফের প্রতি মুহিতের মতো মোমেনেরও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত হচ্ছে। মুহিত-আরিফ যেভাবে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন, মোমেন-আরিফও যদি সেভাবে কাজ করেন, তবে উপকৃত হবেন সিলেটের মানুষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর