সোমবার, ২৭ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রয়েল চিটারের মূল হোতা গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিনব কায়দায় উচ্চপদে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এরা হলেন- মূল হোতা কুমিল্লার বারেক সরকার ওরফে হাজী বারেক, যশোরের হাবিবুর রহমান, কুমিল্লার জাকির হোসেন, ভোলার আক্তারুজ্জামান ও বরিশালের শাহরিয়ার তাসিম। এরা সবাই রয়েল চিটার ডেভেলপমেন্ট (আরসিডি) নামে কথিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ছত্রচ্ছায়ায় প্রতারণা করত। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। তিনি বলেন, ২ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই চক্রের ২২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে বারেকসহ পাঁচজনকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চিটার গ্রুপের প্রধান বারেক।

র‌্যাব-৪ প্রধান বলেন, স্কুলের গ-ি পেরোতে না পারা কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার বাসিন্দা বারেককে ১৮ বছর বয়সে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেন বাবা-মা। তবে সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও মানুষ ঠকানোর নানা কৌশল আয়ত্ত করেন তিনি। দুই বছর পর দেশে ফিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেন প্রতারণার জাল। দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে প্রতারণার মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার এড়িয়ে গেছে। গ্রেফতারের সময় বারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। আরসিডি নামে একটি প্রতারণা কোম্পানি খোলে বারেক। এই নামে অফিস নেওয়াসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও কোম্পানির প্রকৃত নাম সবার অজানা ছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েল চিটার ডেভেলপমেন্টের (আরসিডি) ছোট ছোট গ্রুপ রয়েছে, যারা সুসজ্জিত অফিস ভাড়া করে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রটি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবসরের আগেই টার্গেট করে। এরপর তাদের কোম্পানিতে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে নিয়ে আসে এবং প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। অফিস কর্মকর্তাদের চালচলনে অভিভূত হয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিরা অবসরকালীন প্রাপ্ত পেনশনের টাকা বিনিয়োগ করতেন। এর কয়েক দিন পরই অফিসসহ উধাও হতো চক্রের সদস্যরা। ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার অর্ডারের ফাঁদে ফেলে ৪০-৫০ হাজার টাকার স্যাম্পল নিতো তারা। কয়েক কোটি টাকার মালামাল তৈরিতে যে পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন তা সরবরাহের কথা বলে অগ্রিম হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের জমি বা নির্মাণাধীন ভবনের ওপর ইন্টারনেট টাওয়ার স্থাপনের প্রলোভন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত তারা। ৪৩ বছরে প্রতারণার মাধ্যম অন্তত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বারেক। তিনি ঢাকা শহরে নিজের নামে ফ্ল্যাট, গাড়ি এবং গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় জমিজমাসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন প্রতারণার মাধ্যমে।

 

সর্বশেষ খবর