বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

যানজটে নাভিশ্বাস ঢাকাবাসীর

ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে থাকতে হয় রাস্তায়, সমাধান কী কেউ জানে না

সাখাওয়াত কাওসার ও আলী রিয়াজ

যানজটে নাভিশ্বাস ঢাকাবাসীর

রাজধানীর বনানী থেকে গতকাল দুপুরে তোলা ছবি -রোহেত রাজীব

রাজধানীর উত্তরা থেকে গতকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে রওনা করে বেলা আড়াইটায় মতিঝিল পৌঁছেছেন নাজমুল হোসেন নভেল। থাকতে পারেননি বেলা ১টার একটি ব্যবসায়িক মিটিংয়ে। কেবল ঠিক সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় হাত ছাড়া হয়ে গেছে ৫ লাখ টাকার একটি কাজ। মাসুদ আহমেদ নামের এক ব্যক্তি গতকাল তার অসুস্থ মাকে চিকিৎসা করাতে ঢাকার শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) নিয়ে আসেন। নরসিংদী থেকে যখন তিনি হাসপাতালে এসে পৌঁছান, ততক্ষণে ওই চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ভুক্তভোগী মাসুদের আক্ষেপ, এই যানজট শেষ হবে কবে? যানজট তো আমাদের সবকিছুই কেড়ে নিচ্ছে। সকাল ৮টার দিকে নরসিংদী থেকে বাসে করে ঢাকার কুড়িল ফ্লাইওভারে পৌঁছে গিয়েছিলাম সকাল ১০টায়। তবে হাসপাতালে এসেছি বেলা সোয়া ১টায়। দুর্ভাগ্য আমার, মাকে ওই ডাক্তার দেখাতে পারিনি। তীব্র যানজট আর গরমে নাভিশ্বাস উঠছে রাজধানীবাসীর। গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে ক্ষেত্র বিশেষে প্রকৃত সময়ের চেয়ে ৩ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। ট্রাফিক

ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে তা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। মেট্রোরেল, ইউলুপ, বিআরটি কিংবা পাতাল রেলেও কোনো সমাধান হবে না। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং মেট্রোরেল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, গত তিন বছরে আমাকে মিটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে তার যুক্তি হলো, ডাবল ডেকারের মতো গাড়ি বাড়িয়ে ছোট ছোট গাড়ি যতক্ষণ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিমাণে কমানো না হবে যানজটের পরিবর্তন হচ্ছে না বরং তা ক্রমেই ভয়ানক রূপ নেবে। গতকাল সরেজমিনে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের তীব্রতা বাড়তে থাকে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, পান্থপথ, আগারগাঁও, পল্টন মোড়, রমনা ও আশপাশের এলাকার সড়কগুলোতে দীর্ঘ সময় যানবাহন আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এদিকে রাস্তায় যানজট থাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। যাত্রাবাড়ীর ফ্লাইওভারের নিচে দিনভর গাড়ির জট ছিল। ঢাকায় প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় পার হতে প্রতিটি গাড়ির কমপক্ষে আধাঘণ্টা সময় লেগেছে। যাত্রাবাড়ীর দিকে আসতে কুতুবখালী পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে রাত পর্যন্ত। আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পার হতে দীর্ঘ সময় যাত্রীদের বসে থাকতে হয়েছে। বেলা ১১টায় দেখা গেছে, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন ছিল বাস। মতিঝিলে সারা দিন যানজটে নাকাল হতে হয়েছে। পল্টন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কে মেট্রো রেলের কাজের জন্য সরু হয়ে গেছে। ফলে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে ওই এলাকায়। এক কিলোমিটার সড়ক পার হতে একঘণ্টাও সময় লাগে। হাই কোর্ট মোড় থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ লাইন ছিল সারা দিন। এদিকে কাকরাইল মসজিদ থেকে মগবাজার পর্যন্ত শত শত গাড়ির জট দেখা গেছে। পুলিশ প্লাজা থেকে গাড়ির লাইন প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত হাতিরঝিলের মধ্যে গিয়ে শেষ হয়েছে। বাড্ডা লিঙ্ক রোডের গাড়ি লাইন ছিল গুলশান একনম্বর মোড় পর্যন্ত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে ফুটপাথ সরু করতে, কমিউনিটি ট্রাফিক নিয়োগ, ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত,  বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ এবং ময়লা পরিষ্কার করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমরা চাইছি  মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত জনসাধারণের  নোটিস, পাশের রাস্তা, বিচ্ছিন্নতা ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনাগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা জারি করবে। তিনি আরও বলেন, আগামী মাস থেকে আমরা নিয়মিতভাবে মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক ব্যবস্থার মাসিক অগ্রগতি নিয়ে মিটিং করব। আর প্রাইভেট কারের মতো ছোট গাড়ি না কমালে যানজট কখনো কমবে না।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর মূল প্রান্তের ৮ কিলোমিটারের মেট্রোরেল নির্মাণ কাজটি অনাকাক্সিক্ষত ট্রাফিককে আরও খারাপ করে তুলছে। কারণ মূলত সংকীর্ণ রাস্তাগুলোর ভালো ব্যবহারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের প্রথম অর্ধেক সড়ক নির্মাণের সময় সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের কারণে ঢাকা গণপরিবহন সংস্থা লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের ভোগান্তির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করেনি।

এ বিষয়ে মেট্রোরেলের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমরা আমাদের কাজটি করে যাচ্ছি। কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে, এজন্য আমরা দুঃখিত। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ মেট্রোরেলের দৃশ্যমান অনেক অগ্রগতি দেখাতে পারব বলে আশা করছি। তখন যান চলাচলের জন্য রাস্তার অনেকটুকু খুলে দেওয়া যাবে।

সর্বশেষ খবর