শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে বাসিয়া নদী!

নদীর মাটি পড়ছে নদীতেই

সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট)

খননের নামে গলাটিপে যেন হত্যা করা হচ্ছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাসিয়া নদী। মৃতপ্রায় এ নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই তৃতীয় দফায় চলছে এর খননকাজ। সঠিক মাপে খনন না করে অপরিকল্পিতভাবে দায়সারা গোছের কাজ করে নদীর মাটি নদীতেই ফেলে ভরাট করা হচ্ছে দুই তীর। এর ফলে একদিকে যেমন আরও ছোট করে ফেলা হচ্ছে নদীটিকে, তেমনি সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে জায়গা দখলের। খননের নামে বাসিয়া নদীকে নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন তামাশা ক্ষুব্ধ করেছে বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীকে। তারা বাসিয়ার দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সঠিক মাপে নদী খননের জোর দাবি তুলেছেন। জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বিশ্বনাথ এলাকায় ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাসিয়া নদী পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার এই খননকাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামছুর রহমান এন্টারপ্রাইজ। এর আগে দুবার এর খননকাজ হয়েছে। নদীর উত্তর তীর থেকে দক্ষিণ তীরে ফিতা দিয়ে মেপে ৩৩ মিটার (১০৯ ফুট) সীমানা নির্ধারণ করা হলেও দুবারই সঠিক মাপে খনন হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে ওঠে খননের নামে ঘাস ছাঁটাইয়ের এবং নদীতীরের বিশাল সব গাছ কাটার। বাসিয়া নদীর দুই তীরের ১৮৭ জন অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উচ্ছেদ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন দখলদারের দায়ের করা হাই কোর্টের রিট পিটিশনের কারণে দুই দফা খননকাজের সময় বহাল থাকে অবৈধ স্থাপনাগুলো। এবার তৃতীয় দফায় খননকাজ শুরু হলে ফের ওঠে অভিযোগ। এবারও সঠিক মাপে খনন না করে বরং খনন করা মাটি নদীতীরে ফেলে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে বাসিয়াকেইÑ এমন অভিযোগ তুলেছেন উপজেলাবাসী।

খননকাজ পরিদর্শনে গেলে পাওয়া যায় এমন অভিযোগের সত্যতা। দেখা যায়, নদীর তীর থেকে মাটি খনন করে তীরেই ফেলা হচ্ছে।

বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ফজল খান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও নদীতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই চলছে নদী খনন। খননের নামে চলছে উপজেলাবাসীর সঙ্গে তামাশা। খনন করা মাটি নদীতীরেই ফেলে প্রকারান্তরে নদীটিকে আরও ছোট করে ফেলা হচ্ছে। ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে নদীতীর। এর ফলে লাভবান হবে দখলদাররাই।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামছুর রহমান এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে তৃতীয় দফার খননকাজ পাওয়া সাধনা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার বাদল সরকার বলেন, খনন করা মাটি আপাতত নদীতীরে ফেলা হলেও ইউএনও স্যারের দায়িত্বে থাকায় এগুলো আমরা সরাতে পারছি না। তবে শিগগিরই এগুলো সরানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, ‘নদীতীরের মাটিগুলো সরানো হবে। অবৈধ স্থাপনা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেগুলো উচ্ছেদ করে নদীতীরের অবশিষ্ট অংশও খনন করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর