শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

মন্ত্রী-এমপিকে সংবর্ধনার আড়ালে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধের দাবি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

জামালগঞ্জে স্থগিত উপজেলা নির্বাচন চলাকালে স্থানীয় ‘মন্ত্রী ও এমপিদের সংবর্ধনার আড়ালে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা’ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল করিম শামীম। গতকাল দুপুুরে উপজেলার সাচনা বাজারে নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা এই প্রার্থী। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী তিন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২ জুন জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে দলীয় প্রার্থীকে স্বাগত বক্তা হিসেবে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের সময় এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন দাবি করে অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান প্রার্থীরা। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম। স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম বলেন, ‘ভোটের সময় সংবর্ধনার আয়োজন সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনুষ্ঠানে কেবল মন্ত্রী, এমপি নন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী স্বাগত বক্তব্য দেবেন।’ কাগজপত্রে অনুষ্ঠানের আয়োজক উপজেলা আওয়ামী লীগ হলেও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলে দাবি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি জেলার বর্তমান অভিভাবক সৎ-নিষ্ঠাবান-সজ্জন হিসেবে সমাদৃত পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনায় নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজ উপজেলা ধর্মপাশায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম আহমদ মুরাদের পক্ষে একটি মুহূর্তের জন্যও প্রচারণায় অংশ নেননি। কারণ সেখানে তার ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন রোকন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তার সমর্থন নিয়ে তিনি ঘোড়া প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। কিন্তু জামালগঞ্জে এসে তিনি চরম নৌকাপ্রেমিক সেজেছেন।’ সংবাদ সম্মেলনে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দিজেন্দ্রলাল দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক আলী, ডা. ফারুক আহমেদ, প্রচার সম্পাদক অসিত রায়চৌধুরী, দফতর সম্পাদক সমরেন্দ্র আচার্য্য, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম জিলানী আফেন্দী রাজু, হাফিজা আক্তার দিপু, শাহাব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন বলেন, ‘এই প্রোগ্রাম আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মন্ত্রীর কাছে এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরা, যাতে এলাকার উন্নয়ন হয়।’ সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ৭ জুন, আর আমাদের প্রোগ্রাম ২ জুন। এখানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু দেখছি না। পরিকল্পনামন্ত্রী একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি, তাকে সম্মান দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

ভাটি এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, সুরমা নদীতে দুটি সেতু হচ্ছেÑ মন্ত্রীর মাধ্যমে মানুষের কল্যাণের জন্য এ বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর সঙ্গে চলমান উপজেলা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তিনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ আল আজাদ একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শেখ হাসিনা কর্তৃক মনোনীত। তাঁর পক্ষে আমি যদি দুটি কথা বলি তবে সেটা দোষের হতে যাবে কেন?’

প্রসঙ্গত, ১০ মার্চ প্রথম ধাপে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু ‘স্থানীয় দুই সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করায়, উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ার আশঙ্কা থাকায়’ ভোট গ্রহণের আগের দিন নির্বাচন স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন। গত বুধবার স্থগিত নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ১৮ জুন পুনরায় নির্ধারণ করে ইসি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর