সোমবার, ৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগ্রাসী থাবায় ময়ূর নদ

♦ নানা অনিয়মে ভূমি অফিস
♦ থমকে আছে দখল উচ্ছেদ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

আগ্রাসী থাবায় ময়ূর নদ

এভাবেই দখল হয়ে যাচ্ছে খুলনার ময়ূর নদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় খুলনা মহানগরীর পানি নিষ্কাশনের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত মযূর নদসহ সংযুক্ত ২২টি খাল। শহরকে ঘিরে থাকা নিরালা খাল, খুদের খাল, বাঁশখালী, হরিণটানা খাল সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। নদীর দুই পাড় ভরাট করে বানানো হয়েছে বহুতল ভবন, মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কোথাও বেড়া দিয়ে, কোথাও বাঁশের মাচা করে নদীর জায়গা দখল করা হয়েছে। এদিকে জবরদখল প্রক্রিয়া থামাতে সরকারি পদক্ষেপ নেওয়া হলেও প্রভাবশালী দখলবাজরা রয়েছে অপ্রতিরোধ্য। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অফিসের অনিয়মের কারণে নদীর অনেক জমি চলে গেছে ব্যক্তিমালিকানায়। মালিকানা   নিয়ে আইনগত মীমাংসা না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ময়ূর নদী ও সংযুক্ত ২২টি খালের প্রায় ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। আর গত এপ্রিল মাসে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যৌথ জরিপে নদীর ৯১ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে বানিয়াখামার মৌজায় ৪১ জন, ছোট বয়রায় ১০ জন, বয়রায় ৫ জন, চকমথুরাবাদ ১২ জন, চকহাসানখালী ৫ জন, দেনারাবাদ ১ জন, বানরগাতি ৪ জন ও রায়েল মহল মৌজায় ১৩ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত হয়েছেন। কিন্তু তাদের অনেকে নদীর জমিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে দাবি করছে। কেসিসির এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, নদীর অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করতে ৪টি টিম মাঠে কাজ করেছে। নতুন করে দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন চূড়ান্ত হলেই উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে নতুন তালিকা তৈরিকে কালক্ষেপণ বলে দাবি করে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, নদীর পাড়ে দখলদারদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হওয়ায় একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ভূমি অফিসের সঙ্গে আঁতাত করে দখলদারদের অনেকে নদীর ভরাট করা জমি আরএস খতিয়ানে মালিকানা নিয়েছে। এ কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১২০৫ কিলোমিটারের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, নগরবাসীর দাবির মুখে গত ৫ জানুয়ারি ময়ূর নদ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে কেসিসি ও জেলা প্রশাসন। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গল্লামারী এলাকার কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা। তারপর হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ভূমি অফিসের অনিয়মে নদীর অনেক জমি ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। এ কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলে মামলা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে জনপ্রতিনিধিরা যদি সিদ্ধান্ত নেন সিএস খতিয়ানে সেসব জায়গা নদী হিসেবে উল্লেখ আছে, তাহলে দখল উচ্ছেদ করা যাবে। তাহলেই রেজুলেশন করে দ্রুততম সময়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা সম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর