শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

দূষণে হুমকিতে হালদার ডলফিন

এক বছরে এ নদীতে মারা গেছে ২০টি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে হুমকির মুখে বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ‘গাঙ্গেয় ডলফিন’। এক বছরে এ নদীতে মারা গেছে ২০টি ডলফিন। যা হুমকি হিসেবে দেখছেন গবেষকরা। তাদের শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে একসময় হালদা নদী থেকে বিলুপ্ত হয় যাবে এ প্রজাতির ডলফিন। তাই বিরল প্রজাতির এ ডলফিনকে রক্ষায় ৬টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন হালদা গবেষকরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদায় ২০০টির মতো ডলফিন আছে। যার মধ্যে ২০টি মারা গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হালদা বিরল প্রজাতির ডলফিন শূন্য হয়ে যাবে।’ হালদা নদীতে যে ডলফিন দেখা যায় তা ‘গাঙ্গেয় ডলফিন’ প্রজাতির। ইংরেজিতে একে বলা হয় Ganges River Dolphin; যার বৈজ্ঞানিক নাম Platanista gangetica; স্থানীয়রা যাকে বলে হুতুম বা শুশুক।

এ ডলফিন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের নদীতে দেখা যায়। এর মধ্যে ভারতের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র, বাংলাদেশের পদ্মা, সুন্দরবনের আশপাশের নদী এবং চট্টগ্রামের হালদা নদীতে দেখা মেলে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে বিপন্ন হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুসারে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। জানা যায়, পৃথিবীতে গাঙ্গেয় প্রজাতির ১২০০টির মতো ডলফিন রয়েছে। যার মধ্যে হালদায় ২০০টি ডলফিন ছিল। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ২০টি ডলফিন মারা যায়। মারা যাওয়া ডলফিনগুলোর মধ্যে ১৯টি পূর্ণ বয়স্ক। দূষণ এবং বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের আঘাতেই মূলত মরেছে ডলফিনগুলো।

অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ডলফিন মূলত ইকো সাউন্ড দিয়ে চলাফেরা ও খাবার সন্ধান করে। এদের শরীরের গঠনও নরম প্রকৃতির। ড্রেজারের প্রপেলার বা অন্য কোনো অংশের আঘাত এরা সহ্য করতে পারে না। হালদার ডলফিনের মৃত্যুর প্রধান কারণ বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাত। প্রপেলারের আঘাতে ডলফিন আহত হয় এবং পরে মৃত অবস্থায় ভেসে ওঠে।

ডলফিন রক্ষায় ছয় প্রস্তাবনা : সম্প্রতি হালদায় ডলফিন মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি ডলফিন রক্ষায় ছয়টি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে হালদায় চলাচল করা সব ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল বন্ধ করা, সব জাল ও গ্রিয়ারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, কারখানার বর্জ্য হালদায় প্রবেশ রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা, নদী তীরবর্তী লোকজনের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, মৎস্য আইন সংশোধন করা এং বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন রক্ষায় নিরাপদ বিচরণ, প্রজনন ব্যবস্থা এবং ডলফিন নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা।

তদন্ত দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ডলফিন রক্ষায় যে ছয়টি প্রস্তাবনা করা হয়েছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। না হলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এ প্রজাতির ডলফিন।

সর্বশেষ খবর