শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

টেমসের আদলে হচ্ছে ঢাকার চার নদী

দখলমুক্ত রাখতে স্থায়ী গুচ্ছ পরিকল্পনা

মোস্তফা কাজল

লন্ডনের টেমস নদীর আদলে সাজানো হচ্ছে রাজধানীর চারপাশের চার নদ-নদী। এগুলো হচ্ছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। এসব নদ-নদী দখলমুক্ত রাখতে সরকার একগুচ্ছ স্থায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নানা প্রণোদনামূলক কার্যক্রমও। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য আবহমান বাংলার চিরায়ত নদ-নদীকে স্বরূপে ফেরানো, নদ-নদীর তীরে পর্যটন সুবিধা সৃষ্টি। সেই লক্ষ্যে যে পথনকশা হয়েছে সেখানে ১৫ ধরনের পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য মেগাসিটি ঢাকাকে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করা।

পদক্ষেপগুলো হচ্ছে পানিসম্পদের সদ্ব্যবহার। নদীতীরে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ। সুশোভিত ফুলের বাগান তৈরি। চার নদ-নদীর চার সেতুকে দৃষ্টিনন্দন করা। নদ-নদীর তীরে অবসর সময়ে বসার জন্য শেডসহ বেঞ্চ নির্মাণ। চার নদ-নদী দূষণ রোধে ও রক্ষায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা। চার নদ-নদীতে বিভিন্ন ধরনের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা। পাঠ্যপুস্তকে নির্দিষ্ট কারিকুলাম সংযোজন। আগামীতে নদ-নদীগুলো যেন বেদখল না হয়, সে ব্যাপারে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সংবাদদাতাকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা। জমি কেনার আগে কোনো নদ-নদীর অংশ কিনা তা উল্লেখ করতে আইনের ধারা সংযুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া দখল-দূষণমুক্ত রাখতে পথচারীদের উচ্ছিষ্ট অংশ যথাস্থানে ফেলতে বাক্স বা ঝুড়ি সংরক্ষণ এবং বিষাক্ত বর্জ্য, নির্গত আবর্জনা ও ময়লা ফেলা রোধসহ নদ-নদীর দূষণ বন্ধে জনসচেতনতামূলক প্রকল্প গ্রহণ ও প্রচারপত্র বিলি। এ ছাড়া নদ-নদীর বর্জ্য উত্তোলনের জন্য বর্জ্য উত্তোলন উপযোগী জাহাজ কেনা। এদিকে চার নদ-নদীর পুরান-নতুন সীমানা নির্ধারণ করা থাকলেও অবৈধ দখলদাররা তা মানতেন না। জোর যার মুল্লুক তারÑ এ নীতিতে তারা নদ-নদীর জায়গা নিজের দখলে নিয়ে নিতেন। ফলে নদ-নদী সরু হয়ে স্বাভাবিক নৌযান চলা বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া দখল-দূষণে অনেক নদ-নদীর অবস্থা প্রায় মৃত। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব তো আছেই। বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। অথচ জলবায়ু তহবিলের টাকাও ঝুঁকি বিবেচনায় কাজে লাগে না। এমনকি জলবায়ু তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। অতীতে ছিটেফোঁটা উচ্ছেদ হলেও দখলদারদের রাজত্ব ছিল। এবার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে পুরোদমে। সূত্রমতে, সীমানা চিহ্নিত ও অচিহ্নিত সব নদ-নদীর জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে অট্টালিকা তৈরি করে ব্যবসা করেছেন। চার নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীর সীমানায় অবসরে নগরবাসীর সময় কাটানো এবং পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এভাবে সারা দেশে নদ-নদীগুলো দখলকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।’ নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘দেশের নদ-নদীগুলো একসময় খরস্রোতা ছিল। চামড়াশিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য, পলিথিন, আবর্জনা ও ময়লায় নদ-নদী দূষণ হচ্ছে। অবৈধ দখলে নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃত প্রায় নদ-নদীতে পরিণত হয়েছে। নদ-নদীর জমি নদ-নদীকে ফিরিয়ে এবং খনন করে নদ-নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য লন্ডনের টেমস নদীর আদলে রাজধানীর চার নদ-নদীর অবয়ব তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর