রবিবার, ৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুমকিতে বোটানিক্যাল গার্ডেন

মোস্তফা কাজল

হুমকিতে বোটানিক্যাল গার্ডেন

বোটানিক্যাল গার্ডেনের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বোটানিক্যাল গার্ডেনের জীববৈচিত্র্য হুমকিতে। সরকারি গবেষণা সংস্থা  সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পক্ষ  থেকে  বোটানিক্যাল গার্ডেনের জীববৈচিত্র্য ও ভৌত অবকাঠামো নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ উদ্যানের গাছের বড় অংশই এখন ইউক্যালিপটাস প্রজাতির। দর্শনার্থীদের ফেলা ময়লা-আবর্জনাও চোখে পড়ার মতো। উদ্যানটি পুনর্বিন্যাসের জন্য পরামর্শ নিতে বনবিভাগের সহায়তায় গবেষণা করা হয়েছে। দুই মাস আগে চূড়ান্ত হওয়া ওই গবেষণার মাধ্যমে এই প্রথমবারের মতো উদ্যানটির বৃক্ষ, পাখি, মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের একপাশে রূপনগর থেকে পল্লবী পর্যন্ত ব্যস্ত সড়কের যানবাহনের শব্দ ও  ধোঁয়ার দূষণ বৃক্ষ ও পাখিদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। লেকে পুঁটি, টাকি, রুই, শিং, কাতলা, ফলিসহ মোট ১৪ জাতের মাছ রয়েছে। কিন্তু লেকের পানি দূষিত হয়ে পড়ায় মাছ ও ব্যাঙের দল বিপন্ন হয়ে পড়ছে। উদ্যানের ৭২ শতাংশ এলাকা বৃক্ষ আচ্ছাদিত। মোট বৃক্ষ চার হাজার ৫৬২টি। যার মধ্যে ১৩ প্রজাতির ৯৩৮টি পামজাতীয় গাছ রয়েছে। দুই হাজার ৮৬৬টি বড় বৃক্ষ রয়েছে। যার বেশির ভাগ ইউক্যালিপটাস,  রেইনট্রি প্রজাতির। এসব প্রজাতির গাছের কারণে উদ্যানটিতে লতাগুল্মের বিস্তার ঘটতে পারছে না। পাখিদের বসবাসের স্থান হিসেবে এই গাছগুলো খুব বেশি উপযুক্ত নয়। উদ্যানটিতে মোট ৬০ প্রজাতির ৮৮১টি পাখি আছে। বেশির ভাগই পাতিকাক। এ ছাড়া আছে ময়না, পেঁচা, দোয়েল ও টিয়া পাখি। উদ্যানে ৬০ প্রজাতির প্রজাপতি, ১০ জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী, সাত প্রজাতির সাপ, তিন জাতের উভচর এবং ১৪ জাতের মাছ রয়েছে।  বেড়িবাঁধ সড়কের রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করে। ফলে যানবাহনের হর্ন ও উচ্চশব্দের কারণে পাখিদের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে।

গাছের চারপাশে তরুণ-তরুণীদের বেহায়াপনার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পুরো উদ্যানটিতে মোট সড়ক ৮ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। আছে প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য ব্যায়ামের নানা স্থান। যেখানে-সেখানে ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু দর্শনার্থীরা সেখানে ময়লা ফেলে না। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে বোটানিক্যালের জীববৈচিত্র্য কমে এলেও  সেখানে  যে পরিমাণ গাছ, পাখি ও প্রজাপতি আছে, রাজধানীর জন্য অনন্য। চন্দনা টিয়ার মতো পাখি আর দুলিচাঁপা, কুসুম, মালি আম ও মাধবীলতার নিরাপদ আবাস এই উদ্যান। রাজধানীর সবচেয়ে বড় এই উদ্যান মুঘল আমলে স্থাপিত। বর্তমানে উদ্যানটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে বনবিভাগ। এ উদ্যান বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন হুমকির কথা স্বীকার করে বলেছেন, এ বিষয়ে বনবিভাগকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ বড় শহরে এ ধরনের উদ্যান থাকে। সেখানে সেই দেশের উপযোগী বৃক্ষ থাকে। কিন্তু এ উদ্যানে স্থানীয় জাতের বৃক্ষ খুব কম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর