মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবন

মোস্তফা কাজল

বিপন্ন হচ্ছে সুন্দরবন

সাত কারণে বিশ্ব^ ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বিপন্নের পথে। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, সচেতনতার অভাব, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অবৈধ বসতি স্থাপন ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটা। এ সাত কারণের কথা উল্লেখ করে ৩ জুন গ্রিন বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ করেছে। ওই সুপারিশে বলা হয়, গত ৩৭ বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে ১৪০ বর্গ কিলোমিটার। বনের সৌন্দর্যের প্রতীক সুন্দরী গাছ কমে গেছে প্রায় ২৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এখন ভীষণ সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। একসময় সুন্দরবনে বাস করত ৪০০ প্রজাতির পাখি। সময়ের বিবর্তনে তা কমে ২৭০টিতে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১৩০ প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটারই জলভাগ। এই বিস্তীর্ণ নদী ও খালে রয়েছে প্রায় ১২০ প্রজাতির মাছ। জানতে চাইলে গ্রিন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ড. আরিফ খান বলেন, ‘আমরা টানা দুই বছর সুন্দরবন নিয়ে কাজ করেছি।’ সুপারিশে আরও বলা হয়, সুন্দরবনের ভিতর জঙ্গল ঘেঁষে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে শত শত পণ্যবাহী জাহাজ। এসব জাহাজের সৃষ্ট ঢেউ ভাঙন ধরাচ্ছে সুন্দরবনে। জাহাজগুলোর প্রপেলারের আঘাতে প্রায়ই ডলফিনের মৃত্যু ঘটছে। এ ছাড়া রাতে চলাচলের সময় সার্চলাইটের তীব্র আলো ও শব্দ হরিণ এবং নিশাচর প্রাণীসহ সুন্দরবনের পশুপাখির জীবনচক্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বা লোনাপানির বন হিসেবে ১৯৭৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে জাতিসংঘ শিশু, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো। পৃথিবীজুড়ে যে ৫০ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ আছে, এর ৩৫ প্রজাতিই পাওয়া যায় সুন্দরবনে। এখনো বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নৌযানগুলো মোংলা বন্দরে পৌঁছতে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার বেশি পথ সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে চলাচল করছে। তাই মোংলা বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য বিকল্প নৌপথ চালুর পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০০১ সাল থেকে মোংলা বন্দর পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। তখন থেকে প্রধান নৌপথ ঘাসিয়া খাল খনন না করে ফেলে রাখা হয়। সরকার ইতিমধ্যে খালটি খনন করার এবং সেখান থেকে চিংড়ি প্রকল্পগুলো অপসারণের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। গবেষক ও পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের অপকর্ম ও অবহেলার কারণে সুন্দরবন মহাদুর্যোগের মধ্যে পড়েছে। সংবিধান অনুযায়ী জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সুন্দরবনে মোট সাত ধরনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি ব্যবস্থায় আট স্তরের বাস্তুসংস্থান আছে। এখন প্রতিটি প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও বাস্তুসংস্থান চক্র দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবেশবিদরা মনে করেন, সুন্দরবন আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। বিরল প্রজাতির রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রাহরিণের আবাসস্থল সুন্দরবন। এ ছাড়া বহু প্রজাতির বৃক্ষ, লতা-গুল্ম ও প্রাণীর কারণে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নানা সংকটের কারণে আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। সুবিশাল বন সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে আধুনিক সরঞ্জামসহ দ্রুতগামী জলযানের। ২০০২ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে সুন্দরবনের তেলদূষণের ওপর একটি গবেষণা চালানো হয়। ওই গবেষণায় তেলদূষণ মোকাবিলায় উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সংগ্রহের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও সে সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর