শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচন

বাজেট ২০১৯-২০২০

মানিক মুনতাসির

প্রতিবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে উচ্চ হারে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে সরকার। দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু এখনো প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র। আর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না কাক্সিক্ষত হারে। অন্যদিকে এখনো দারিদ্র্য বিমোচনে মন্থর গতি বিরাজ করছে। ফলে আসছে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটের জন্য এ দুটি সমস্যাকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থ বিভাগ। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হচ্ছে। প্রত্যেক পরিবার থেকে অন্তত একজনের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। গ্রামেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রতিটি উপজেলায় কর অফিস স্থাপন করা হবে। কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটনোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এদিকে এবারের বাজেটের শিরোনাম ঠিক করা হচ্ছে ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। এই শিরোনামে বাজেটের ডকুমেন্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে ৩ কোটি ৪৯ লাখ মানুষ। শতাংশের হিসাবে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে হতদরিদ্রের হার এখন ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বা ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০১০ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সে হিসাবে ১০ বছরে দারিদ্র্য কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। অথচ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার স্বপ্ন দেখছে সরকার, যা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। জানা গেছে, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আগামী বাজেটে সুবিধাবঞ্চিত, হরদরিদ্র, বিধবা, অসচ্ছল মানুষ, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সব ধরনের ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নতুন করে ১৩ লাখ মানুষকে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৮৯ লাখ, যা চলতি বাজেটে ছিল প্রায় ৭৬ লাখ। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ হতদরিদ্রমুক্ত হবে বলে আশা করছে সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে দেশে ১৪ লাখ পুরুষ ও ১৩ লাখ নারী বেকার। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়কালে বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ। বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন করে ২২ লাখ কর্মক্ষম লোক চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ কর্মক্ষম মানুষ। দুই-তৃতীয়াংশ কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ পায় না। এর মধ্যে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর ২১ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। কিন্তু প্রতিবছর কর্মসংস্থান  তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৩ লাখের।

এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর ৮ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন থাকছে। শুধু তা-ই নয়, ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ বা ইআইইউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শতকরা ৪৭ ভাগ স্নাতকই বেকার। ফলে এই শিক্ষিত/অশিক্ষিত কর্মক্ষম জনশক্তিকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা সরকারের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর