মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরেন্দ্র অঞ্চলে কদর বাড়ছে আম্রপালির

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বরেন্দ্র অঞ্চলে কদর বাড়ছে আম্রপালির

বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে আম্রপালির কদর বাড়ছে। আম চাষে অনেকেই সফলতার মুখ দেখছেন। দেশীয় জাতের আম গোপালভোগ, ফজলি কিংবা ল্যাংড়ার চেয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আঁশবিহীন সুস্বাদু, আম্রপালির বারি-৩ চাষে কৃষক ও চাষিরা ঝুঁকে পড়ছেন। আগে শৌখিন আমচাষিরা অল্প পরিসরে চাষাবাদ করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিকভাবেও গড়ে উঠেছে সুস্বাদু আম্রপালি বারি-৩ আমের বাগান। সবচেয়ে বেশি আম্রপালি চাষাবাদ হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবঞ্জের সদর উপজেলার আমনুরা এলাকা, নাচোল, রহনপুর, নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুরে। এ ছাড়া রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী অঞ্চলগুলোতে আম্রপালি চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় এখন বাগানে বাগানে শোভা পাচ্ছে আম্রপালি। ছোট গাছে আম ধরে মাটিতে হেলে পড়ছে থোকা। এসব দেখে সড়কে চলাচল করা অনেক পথচারীর নজর কাড়ছে সহজেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে জেলায় মাত্র ৫২ বিঘা জমিতে আম্রপালি চাষ শুরু করা হয়। ২০১৪ সালে হয় ৭৫ বিঘা। ২০১৫ সালে বেড়ে আম্রপালি চাষ হয় ১১২ বিঘা জমিতে। ২০১৬ সালে তা ব্যাপক বিস্তার হয়ে জেলায় আম্রপালি চাষ হচ্ছে ৩২১ বিঘা জমিতে। সর্বশেষ ২০১৮-২০১৯ সালে চাষাবাদ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে।

 এ ছাড়াও নওগাঁ জেলাতেও আম্রপালি চাষ হয়েছে ব্যাপক হারে। বাড়ছে রাজশাহী জেলাতেও।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের জামতলা এলাকায় আসলাম নামের এক ব্যক্তি সড়কের পাশে তিন বিঘা জমিতে আম্রপালি চাষাবাদ করেছেন। তার বাগানে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় আম। আসলাম জানান, মাত্র চার বছর আগে তিন বিঘা জমিতে ৩০০ আম্রপালি গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বছর থেকেই আম ধরা শুরু। গত বছর এ তিন বিঘা আমবাগান থেকে আম বিক্রি করে দেড় লাখ আয় করেছেন। চলতি বছর আরও বেশি হবে বলে আশা তার।

নাচোল উপজেলার নিজামপুর গ্রামের আম্রপালি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করছেন রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচারের পরামর্শে তিনি দুই বছর আগে তার ৫ বিঘা জমিতে আম্রপালি গাছ রোপণ করেছেন। এ বছর প্রথম আম ধরেছে। রোপণের অল্প সময়ে আম ধরায় খুশি তিনি। তিনি আরও জানান, ধানসহ অন্য ফসল করে লোকসান হচ্ছে। তাছাড়া অন্য আমের জাত লাগালে জায়গা ও সময় দুটোই বেশি লাগে, আর আম্রপালিতে দুটোই কম লাগায় অল্প সময়ে বেশি লাভ হচ্ছে। তাই তিনি আম্রপালি চাষাবাদ করেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, আম্রপালি গাছ বামন আকৃতির ও ঝোপালো। ছোট হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য জাতের আমগাছের সমান বয়স ধরে বাঁচে। দেশের সব এলাকায় এবং মাটিতে উপযোগী। অল্প জমিতে বেশি গাছ লাগানো যায়। এমনকি বাড়ির ছাদে টবেও হয়। এ জাতটি জমিতে মিশ্রভাবে আবাদ করা যায়। প্রথম বছরেই ফল দেয়। আঁশবিহীন সুস্বাদু আম্রপালির বারি-৩ চাষের বরেন্দ্র অঞ্চলে জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। এ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে এ জাতটি পাশের দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে আম্রপালি বারি-৩ আম চাষ বরেন্দ্র অঞ্চলসহ পুরো দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে ১৯৯৩ সালে জাতীয় আম প্রদর্শনীতে সর্বপ্রথম আমের গুণগত মান দেখে আম্রপালি আম চাষের প্রতি আমাদের দেশে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর