মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভ্যাটের রূপ বদল

ব্যবসা ও আমদানিতে বসছে অগ্রিম কর

রুহুল আমিন রাসেল

আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অগ্রিম ভ্যাটের রূপ বদলে বাণিজ্যিক (ট্রেড) ও আমদানি পর্যায়ে বসতে পারে অগ্রিম কর। অর্থ মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে এ কৌশল নিতে যাচ্ছে সরকার। ৪ শতাংশের কমবেশি হারে এই অগ্রিম কর আগামী ১৩ জুন অর্থমন্ত্রীর সংসদে বাজেট উত্থাপনের দিন থেকেই কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ উদ্যোগকে নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশনের শামিল মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে  ভালো মনে করছেন না রাজস্ব বিশ্লেষকরা। সূত্র জানান, প্রচলিত ট্রেড ভ্যাট (এটিভি)-এর পরিবর্তে নতুন বাজেটে অগ্রিম কর পুনঃ স্থাপন হতে যাচ্ছে। তবে এই অগ্রিম কর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মাসিক রিটার্ন দাখিলের পর ফেরতযোগ্য। কয়েক দফা সময় পিছিয়ে আসছে অর্থবছরে সরকার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ককর আইন, ২০১২। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর শর্তের আলোকে তৈরি নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ীরা তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তবে কিছু সংস্কারের পর ভ্যাটের পাঁচটি হার নির্ধারণের মধ্যদিয়ে নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। সূত্র জানান, এবার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ভ্যাটের পরিধিও বড় করা হচ্ছে।

স্পর্শকাতর ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে ন্যূনতম হার নির্ধারণ করে ভ্যাট আইন সংশোধনের কাজও শেষ করেছে নীতিনির্ধারক মহল। এজন্য ওষুধ, জ্বালানি পণ্য পেট্রোলিয়াম ও নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম উপকরণ রড, বিভিন্ন জাতের মসলা, কাগজসহ যেসব পণ্য জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে সেসবের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশসহ মোট পাঁচ স্তরের ভ্যাটহার রাখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে এ উদ্যোগ ভালো মনে হচ্ছে না। তবে সব নির্ভর করবে কীভাবে অগ্রিম কর আদায়ের বিষয়টি প্রয়োগ করা হয় তার ওপর।’ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদেরে শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) ভ্যাটবিষয়ক কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক গতকাল বলেন, ‘এ উদ্যোগ পুরনো মদ নতুন বোতলে পরিবেশনের শামিল। অগ্রিম কর নিয়ে কীভাবে ভ্যাটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে, এটাই এখন প্রশ্ন।’ এনবিআরসূত্র জানান, বর্তমানে ১৯৯১ সালের প্রচলিত ভ্যাট আইনে নির্দিষ্ট ৩৯টি খাতে প্রযোজ্য হারে উৎসে ভ্যাট আদায় করা হয়। নতুন আইনে উৎসে ভ্যাট কর্তনের পরিধি ব্যাপকহারে বাড়ছে। এখন শুধু আমদানি পর্যায়ে বাণিজ্যিক পণ্যে (কমার্শিয়াল ইমপোর্টার) অগ্রিম ভ্যাট (এটিভি) আদায় করা হয়। নতুন আইনে ২, ৫, ৭.৫, ১০ ও ১৫ শতাংশÑ এ পাঁচটি স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ভ্যাট আসবে ১৫ শতাংশ স্তর থেকে। বর্তমানে যারা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেন, রেয়াত বা ক্রেডিট পান তারা। নতুন আইনে একই নিয়মে ভ্যাট আহরণ করা হবে। এ স্তরে সাধারণত বড় ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন এবং তারা রেয়াত পেয়ে আসছেন। ১৫ শতাংশের নিচের রেট বা স্তরে যারা ভ্যাট দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে রেয়াত সুবিধা থাকবে না।

সূত্র জানান, নতুন আইনে সেবা খাত ১০ শতাংশ রেটে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে হোটেল ও রেস্টুরেন্টকে ৭.৫ শতাংশে রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদনমুখী পণ্যগুলোকে ৫ শতাংশ স্তরে রাখা হচ্ছে। নতুন আইনে ভ্যাটমুক্ত সীমা বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ৫০ লাখ ১ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ১৫ ও স্থানীয় পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের নিয়ম আগের মতো বহাল রাখা হয়। একই সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ১১টি স্তরের পরিবর্তে ৮ স্তরে নির্ধারণ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর