সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্বেগ

নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বিবৃতিকে অগ্রহণযোগ্য, অবাস্তব, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার অপপ্রয়াস উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ। বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ১৩ জুন বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত নোয়াবের  ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ কতটা বাস্তব?’ শীর্ষক বিবৃতিটি সাংবাদিক সমাজকে দারুণভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন করেছে। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, নবম মজুরি বোর্ড ঘোষণার চূড়ান্ত সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের রুটি-রুজি ও মর্যাদার জায়গাটিকে মালিকপক্ষ যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য নতুন সংকট তৈরি করবে, মালিকের সঙ্গে শ্রমিক তথা গণমাধ্যমকর্মীদের দূরত্ব ও বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করবে, যার প্রভাব পুরো শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও পেশা। সুতরাং এ বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা পেশার জন্য বিশেষভাবেই রাষ্ট্রকে ভাবতে হয়। সেখানে সরকারি চাকরির কোনো গ্রেডের সঙ্গে এর তুলনা করা মানেই গণমাধ্যমকর্মীদের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্œ তোলা, যা কখনই মালিকপক্ষের কাছ থেকে কাম্য নয়। নোয়াবের বিবৃতিতে আয়কর নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তারও সমালোচনা করেন সাংবাদিক নেতারা।

বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের বিরুদ্ধে তথা গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নোয়াব যে বিরোধিতা করছে সেটি না করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যারা নিজেদের ‘আখের গুছিয়েছে সেই মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিলে মনে হতো যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।

নোয়াবের সদস্য অনেক পত্রিকার মালিক মিথ্যা তথ্য দিয়ে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সর্বোচ্চ সুবিধাদি নিলেও কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধাদি দেননি বা দেন না বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিক নেতারা। তারা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যেসব পত্রিকা সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

নোয়াবের বিবৃতিতে যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো আমলে নিয়ে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে কিনা, তদন্ত কমিটি করে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা।  

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য সেক্টরের কর্মকর্তারা ছুটি বা অবসর গ্রহণ অথবা অন্যান্য কারণে যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, সংবাদপত্রে তার অনেকাংশই নেই। সে কারণে বছরে দুটি গ্র্যাচুইটি এবং এক মাসের বেতনসহ বিনোদন ছুটি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। আর সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর নোয়াবের সদস্যরা শিল্প মালিক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

নেতারা বলেন, সংবাদপত্র শিল্পের উৎকর্ষ ও সাংবাদিক শ্রমিক-কর্মচারীদের যথাযথ কল্যাণে নোয়াব বা মালিকপক্ষ সরকারের কাছ থেকে আরও সুযোগ-সুবিধা পেলে বিএফইউজে ও ডিইউজের কোনো আপত্তি নেই। তবে মজুরি বোর্ড ঘোষণার সূত্র ধরে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই করা হলে বা তাদের ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত করা হলে অবশ্যই তা মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে গণমাধ্যমকর্মী তথা সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

সর্বশেষ খবর