রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বস্তি মিলছে রাজধানীর চক্রাকার এসি বাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বস্তি মিলছে রাজধানীর চক্রাকার এসি বাসে

তীব্র গরম ও যানজটের মধ্যে বাসে উঠলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। চক্রাকার এসি বাস চালু হওয়ায় যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছেন। তবে এ বাসের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় এবং যানজটের কারণে পর্যাপ্ত সুবিধা থেকে যাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গণপরিবহনের দুর্ভোগ নিরসনে এ বছরের ২৭ মার্চ চক্রাকার বাসের উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এ সার্ভিস উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও গ্রিন ঢাকা এ বাস পরিচালনা করছে।

আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই চক্রাকার বাসে এয়ারকন্ডিশন (এসি) সুবিধা রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন রুটের নির্দিষ্ট স্থানে চক্রাকার বাসের টিকিট কাউন্টার রয়েছে। কাউন্টার থেকে সংগৃহীত টিকিট দেখিয়ে যাত্রীদের বাসে উঠতে হয়। কাউন্টারে বাস পৌঁছানোর পর চালক রিমোটের মাধ্যমে দরজা খুলে দেন। যাত্রী ওঠার পর আবার তিনিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা বন্ধ করে দেন। ধানমন্ডি-নিউমার্কেট-আজিমপুরসহ দক্ষিণ সিটির নির্ধারিত রুটের ৩৬টি স্থানে এ বাস থামে।

 চক্রাকার বাসের নির্দিষ্ট ভাড়া সর্বনিম্ন ১০ টাকা। দূরত্বভেদে ২০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় যাতায়াত করা যায়। সিটিং সার্ভিসের মতো চক্রাকার বাস যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠা-নামা করায় না। ফলে এ বাসে যাত্রীরা বেশ স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছেন। এসি সুবিধা থাকায় চক্রাকার বাসের ভাড়া বেশি। গতকাল রাজধানীর পল্টনে গিয়ে দেখা যায়, চক্রাকার বাসের টিকিট কেটে ২৫ জন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন।

 ২০ মিনিট পর গাড়ি কাউন্টারে আসতে দেখা যায়। যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় মাত্র আটজন উঠতেই তিল ধারণের জায়গা মিলছে না। বাকিদের আরও ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

ধানমন্ডি বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, সেবা ভালো হওয়ায় চক্রাকার গাড়িতে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। মানুষের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা সীমিত হওয়ায় গাড়িতে ভিড় বেশি হচ্ছে। ৫০ সিট ভরে গিয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে যাতায়াত করছে। তাও জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

পল্টন থেকে বসুন্ধরা যাওয়ার টিকিট কেটেছেন রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘এই বাসে বেশ কয়েকবার যাতায়াত করেছি। বাসে ওঠার জন্য কোনো হুড়োহুড়ি করতে হয় না। গরমে যানজটের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা প্রায় অসম্ভব। অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। এই গাড়িতে উঠলে এসি বাতাসের কারণে অন্তত একটু স্বস্তি মিলছে।’

কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের সুবিধায় চক্রাকার বাসের সেবা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। যানজটের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গুলিস্তান থেকে পল্টন পর্যন্ত আসতে আধাঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। টিকিট কেটেও অনেক যাত্রী সময় বাঁচাতে টাকা ফেরত নিয়ে চলে যাচ্ছে।’

আরেকজন যাত্রী মতিউর রহমান বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় ভরে গেছে। অনেক চালকের লাইসেন্স নেই। এসব কারণে সড়কে বাস দুর্ঘটনায় প্রায়ই মানুষ প্রাণ হারায়। সার্বিক বিবেচনায় চক্রাকার বাস অনেক ভালো সেবা দিচ্ছে। এ বাসের চালকরা দক্ষ। ফিটনেসবিহীন বাস বাজেয়াপ্ত করে আধুনিক চক্রাকার বাসের সংখ্যা বাড়ালে দুর্ঘটনা কমবে।’

মতিঝিল বিআরটিসি বাস ডিপোর ম্যানেজার নায়েব আলী বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন রুটে ২৯টি গাড়ি চলছে। প্রতিদিন চার হাজারের বেশি মানুষ চক্রাকার বাসের সেবা পাচ্ছে। ৫ থেকে ১০ মিনিট পরপর একটি কাউন্টারে বাস পৌঁছানোর কথা। কিন্তু যানজটের কারণে এই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৫ থেকে ২০ মিনিট দেরি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যানজট নিরসন ও নিরাপত্তার কথা ভেবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি তুলে দেওয়া জরুরি। যাত্রী সুবিধার কথা চিন্তা করে অন্যান্য রুটে পর্যায়ক্রমে আরও বাস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গণপরিবহনের নৈরাজ্য নিরসনে যে সব সুপারিশ করা হয়েছিল চক্রাকার বাসগুলো তা মেনে চলছে। এ জন্য সুফল আসছে। সারা ঢাকা শহরে এ প্রকল্প চালু করা গেলে গণপরিবহনের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দূর করা সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর