রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিআরটিসির নারায়ণগঞ্জ ডিপোতে তালা দিয়েছেন শ্রমিকরা

আজ থেকে অন্যান্য ডিপো বন্ধের ঘোষণা

নিজামুল হক বিপুল

ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বেতন বকেয়া পড়ায় আর্থিক কষ্টে দিন কাটছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসির চালক ও শ্রমিকদের। রাজধানীর একটি বাদে দেশের অন্য ২০টি ডিপোয় বেতন বকেয়া পড়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই বেতন বকেয়া পড়েছে। এ অবস্থায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন চালক ও শ্রমিকরা। গতকাল বিআরটিসির নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপোয় তালা দেন আন্দোলনকারীরা। আজ থেকে অন্যান্য ডিপোর চালক ও শ্রমিকরাও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বিআরটিসির বাস চলাচলে বিঘœ ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে সম্প্রতি বিআরটিসি চেয়ারম্যানের ‘দুর্নীতির বিবরণ’ তুলে ধরে চালক ও শ্রমিকরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং এ-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিকে। বিআরটিসির চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল ভারত থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস রাস্তায় নামার পর আর্থিক সংকট দূর হবে। বকেয়া বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ভারত থেকে নতুন বাস আসার পরও বেতন পাচ্ছেন না চালক-শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, রাজধানী ঢাকায় শুধু কল্যাণপুর বাদে অন্য ডিপোগুলোয় বেতন বকেয়া পড়েছে। গত এক বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না গাবতলী বাস ডিপোর অধীন চালক ও শ্রমিকরা। একইভাবে জোয়ারসাহারা ডিপোর চালক-শ্রমিকদের বেতন বকেয়া ১০ মাস ধরে। বিআরটিসি সূত্র জানান, ঢাকার মতিঝিল ডিপোয় পাঁচ, মোহাম্মাদপুরে ছয়, গাজীপুরে সাত ও মিরপুর ডিপোয় চার মাস বেতন বকেয়া রয়েছে। রাজধানীর পাশের নারায়ণগঞ্জ ডিপোয়ও চালক ও শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পড়েছে। শ্রমিকরা জানান, বিভিন্ন ডিপোয় ছয় থেকে ১২ মাসের বেতন না হওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের অভিযোগ, ডিপো ম্যানেজারদের মাধ্যমে চেয়ারম্যান বিভিন্ন রুট, লং লিজ ও বিভিন্ন স্থাপনা থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন। বিআরটিসির চালক-শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, বিআরটিসি চেয়ারম্যান প্রতি ডিপো থেকে মাসিক ও সাপ্তাহিক টাকা তুলে নেন। যে কারণে বিআরটিসির বাস রাস্তায় চললেও মাস শেষে তারা বেতন পাচ্ছেন না। তারা বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে অন্যত্র বদলির দাবি জানান। শ্রমিকদের অভিযোগ, ইতোপূর্বে বেতন চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাদের ৫০ জন শ্রমিককে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। বেতনের দাবিতে পোস্টার ছাপায় মফিজুর রহমান নামে একজন বাসচালককে চাকরিচ্যুত করেন চেয়ারম্যান। এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো অবরুদ্ধ করে রাখেন চালক ও শ্রমিকরা। তাদের দাবি, তাদের সাত মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আজ গাবতলী, জোয়ারসাহারাসহ বিভিন্ন ডিপোয় তালা দিয়ে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন চালক-শ্রমিকরা। বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া বিভিন্ন ডিপোয় বেতন বকেয়া পড়ার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ‘নতুন বাস ফ্লিটে যোগ হয়েছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ঈদে বেতন-বোনাস দেওয়ার কারণে নিয়মিত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।’ শ্রমিক ছাঁটাই ও বদলি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব চালক-শ্রমিক আন্দোলনের নামে রাস্তা বন্ধ করেছেন তাদের বদলি করা হয়েছে। একজন চালক হয়ে মন্ত্রীর ছবি দিয়ে পোস্টার বের করায় তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর