সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই মাস পর পর মৌসুমি ফল পরীক্ষার নির্দেশ

চালের বস্তায় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই কেন -হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই মাস অন্তর অন্তর বাজারে থাকা মৌসুমি ফলমূল পরীক্ষার জন্য বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ফলমূলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ফরমালিনের ব্যবহার রোধে সরকারি এ সংস্থাটিকে এই পরীক্ষা অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। এ ছাড়া স্থল বন্দরগুলো দিয়ে যাতে কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য দুই মাসের মধ্যে সরকারকে সেখানে কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট স্থাপন করতে বলা হয়েছে।

আদালতে এ সময় রিটের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ফরিদুল আলম, বিএসটিআইর পক্ষে আইনজীবী এম আর হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার শুনানি করেন। গতকাল আমসহ মৌসুমি ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার রোধ সংক্রান্ত মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে ফরমালিন পরীক্ষায় আধুনিক যন্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি উঠে আসে। এদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সকিপুর খাদ্যগুদামে ৮০০ মেট্রিকটন চালের বস্তায় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না করার বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে আগামী ১৮ জুলাই তাদের এ ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলেছে আদালত। চাল পরীক্ষা সংক্রান্ত বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

কারাবন্দী ও কারা চিকিৎসকের তালিকা চায় হাই কোর্ট : সারা দেশের কারাগারগুলোতে বন্দীদের ধারণ ক্ষমতা, বন্দী ও চিকিৎসকের সংখ্যা এবং চিকিৎসকের শূন্যপদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। জনস্বার্থে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। ছয় সপ্তাহের মধ্যে কারা মহাপরিদর্শককে তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে আদেশে।

২৮ বছর ধরে এক হত্যা মামলা স্থগিত থাকায় হাই কোর্টের উষ্মা : আদালতের আদেশে ২৮ বছর ধরে একটি হত্যা মামলার বিচার স্থগিত থাকায় উষ্মা প্রকাশ করে হাই কোর্ট বলেছে, এজন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিচার বিভাগও দায় এড়াতে পারে না। বিলম্বিত বিচার মানে বিচারকে অস্বীকার করার নামান্তর।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ-সংক্রান্ত রুলে শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছে।

যার আবেদনে এ মামলার বিচার স্থগিত সেই মারুফ রেজার আইনজীবীর উদ্দেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘উনি (মারুফ) তো এ মামলায় আসামি বা সাক্ষী কোনো তালিকায় তার নাম নেই। তাহলে কীভাবে নিম্ন আদালতের অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করলেন। আপিল বিভাগের রায়ও আছে অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করা যাবে না। মামলার যে কোনো অবস্থায় বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দিতে পারে।’

জবাবে মারুফ রেজার আইনজীবী ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ মামলা নিয়ে প্রতিবেদন দেখেছি। অনেক পুরনো মামলা। যে নথিপত্র আমাদের কাছে রয়েছে তা থেকে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।’ এরপর ২৮ বছর আগে অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের দেওয়া আদেশ আদালতে পড়ে শোনান তিনি। তখন হাই কোর্ট উল্লেখ করে, ‘অধিকতর তদন্তের আদেশে আপনার মক্কেল কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন এবং এ ধরনের রিভিশন মামলা করার আইনগত এখতিয়ার তার ছিল কিনা তা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে।’ জবাবে ওই আইনজীবী বলেন, ‘কোর্ট যেভাবে চায় সেভাবেই আদালতকে আমরা সহযোগিতা করব।’

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘মারুফ রেজার অবস্থা এমন যে, “ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না”। যার নাম এজাহারে বা অভিযোগপত্রে নেই তিনি কীভাবে অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিভিশন মামলা করলেন? মারুফ রেজা খুনের ঘটনায় জড়িত বলেই বিচার স্থগিতের জন্য ওই আবেদন করেছেন।’ আদালত উল্লেখ করে, ‘দীর্ঘ শুনানির কোনো সুযোগ নেই। বুধবার রুলের ওপর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে।’

প্রসঙ্গত, সগিরা মোর্শেদ সালাম (৩৪) নামে এক নারী ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে ছিনতাইকারীর গুলিতে মারা যান। এ ঘটনায় ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রিকশাচালক দুজনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু নামে এক আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ। সাক্ষ্য চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার একটি আদালত। এর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করেন মারুফ রেজা। ওই বছরের ২ জুলাই হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টে গতকাল মামলাটির রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর