বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
বাজেট ২০১৯ - ২০

বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা

সহজ করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড় প্রক্রিয়া

মানিক মুনতাসির

শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এজন্য চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ করা হয়। এমনকি অর্থবছরের ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর গত মাসে প্রকল্প ব্যয় ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে প্রকল্পের অর্থছাড়ের সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয় প্রকল্প পরিচালকদের হাতে।

ফলে প্রকল্পের অর্থছাড়ের জন্য অর্থবিভাগ কিংবা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কোনো অনুমতির প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজে গতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নের গুণগত মান রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে এডিপির অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং অপচয় রোধ করে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন করা যে কোনো সরকারের জন্যই কঠিন বিষয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি বছর বড় বড় বাজেট দেওয়া হয়। কিন্তু নানা ধরনের বাধার কারণে অর্থবছরের মাঝামাঝিতে গিয়ে বাজেট সংশোধন করা হয়। সেই সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

ফলে বাজেটের আকার বাড়ানোর চেয়ে বাস্তবায়নকে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, প্রতি বছরই দেশে বাজেটের আকার প্রায় ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু সে হারে বাজেট বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বাজেটের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি বছর গড়ে মূল বাজেটের ৮০ শতাংশের কাছাকাছি বাস্তবায়িত হয়।

সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা এবং বাজেটে শৃঙ্খলা বজায় না থাকার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন পুরোপুরি হচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে এসব বাধা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি অর্থছাড়ের বিষয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়েছে। সরকার মনে করে আগামী বছরই শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। এ বাজেট বাস্তবায়নে গতি আনতে অর্থবছরের শুরুতেই বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, যথাযথ বাস্তবায়ন ও নিয়মিত পরিবীক্ষণের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সে লক্ষ্যে একটি নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক প্রান্তিক শেষ হওয়ার পরবর্তী এক মাসের মধ্যে নীতিমালায় সংযুক্ত ফরম ব্যবহার করে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা, প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা, প্রকল্প দলিলের অসম্পূর্ণতা ও বার বার প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন বা সংশোধন এসব সমস্যা সমাধানেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ মতে, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৪ দশমিক ৫ থেকে ৯২ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। আর এডিপির ব্যয় ছিল ৮৯ দশমিক ৯ থেকে ৯৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯২ শতাংশ। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ। আর সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৮ শতাংশ। চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-১৮ থেকে মার্চ-১৯) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর