শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

এক সিট চায় ১৫ জন!

জিন্নাতুন নূর

এক সিট চায় ১৫ জন!

বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম নারীর তুলনায় সরকারি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে যে সিট আছে তার সংখ্যা একেবারেই কম। বর্তমানে সারা দেশে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য হোস্টেলে আসন সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৪০৮টি। মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে আগের থেকে এসব হোস্টেলে সিট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকায় কাজ করতে আসা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী এসব হোস্টেলে সহজে সিট পাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসব হোস্টলের মধ্যে দুটি হোস্টেলে প্রতি মাসে যে সংখ্যক সিট খালি হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আবেদনকারী সিট পেতে আবেদন করেন। ক্ষেত্রবিশেষে এসব হোস্টেলে সিটের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা তিন থেকে ১৫ গুণ বেশি। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাে  সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে স্বল্পমূল্যে কর্মজীবী মহিলাদের নিরাপদ আবাসন সুবিধা দিতে মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের সারা দেশে আছে সাতটি কর্মজীবী হোস্টেল। এই হোস্টেলগুলোর মধ্যে রাজস্ব খাতে পরিচালিত হচ্ছে নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, মিরপুরে নওয়াব ফয়জুন্নেসা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল এবং খিলগাঁওয়ের বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল। আর নিজস্ব অর্থায়নে বিভাগীয় শহর খুলনা (আসন ১৫০টি), যশোর (আসন ৪৫টি), রাজশাহী (আসন ১১২টি) এবং চট্টগ্রামে (আসন ২১৫টি) কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার কর্মজীবী হোস্টেলগুলোর মধ্যে সিট প্রাপ্তির জন্য নারীরা সবচেয়ে বেশি আবেদন করেন নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে। ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় কোনো মাসে এই হোস্টেলে ১০টি সিট খালি হলে এর বিপরীতে ১৫০টি আবেদনপত্র জমা হয়। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কাছে হওয়ায় এবং সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ায় এ হোস্টেলে থাকার ব্যাপারে মেয়েদের আগ্রহ বেশি। সিট পেতে মেয়েরা প্রভাবশালী মানুষদের দিয়েও অনুরোধ পাঠাচ্ছে। যা ঢাকার অন্য সরকারি হোস্টেলগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেয়েরা চাকরি পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে থাকার জন্য এখানে উঠতে চান। নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সমন্বয়কারী সাবেকুন নাহারও খালি সিটের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জুলাই মাসের বৈঠকে নতুন আবেদনকারীদের সঙ্গে দুই-তিন মাস আগে যারা আবেদন করেছিল অর্থাৎ অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিল তাদের আবেদনও যাচাই-বাছাই করা হবে। তিনি এও স্বীকার করেন যে, মন্ত্রণালয় ও  প্রভাবশালীর কাছে নিজেদের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে অনেকে এখানে সিট পেতে লবিং করে। বর্তমানে হোস্টেলের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। এতে ৫০৩টি সিট বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৭০০ সিট। খালি হওয়া সিটের বিপরীতে তিনগুণ বেশি আবেদনকারী সিট বরাদ্দের জন্য আবেদন করছে মিরপুরে নওয়াব ফয়জুন্নেসা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ জানান, গত মে মাসে চারটি সিট খালি হলে এর বিপরীতে আবেদনপত্র জমা পড়ে ১২টি।

আর চলতি জুনে ৩টি সিটের বিপরীতে মোট আবেদনপত্র জমা হয় ১১টি। বর্তমানে হোস্টেলের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। হোস্টেলের প্রোগ্রাম অফিসার ছামিনা হাফিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্প্রসারণ কাজ শেষে আমাদের সিট সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ৫৭৪টিতে। আমাদের এখানে যারা থাকেন তাদের সবাই চাকরিজীবী। প্রতি মাসে যাচাই-বাছাই শেষে বোর্ডারদের সিট দিই।

তবে ঢাকার সরকারি হোস্টেলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক সহজে সিট পাওয়া যায় বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল খিলগাঁওয়ে। প্রতি মাসে এখানে যে পরিমাণ সিট খালি হয় সে পরিমাণ আবেদনকারী সিট পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। গত মাসে এখানে ১৫-২০টি সিট খালি হয় আবার সমপরিমাণ আবেদনকারীরা সিটের জন্য আবেদন করে বলে জানান এই হোস্টেলের প্রধান রাহেনুর রহমান। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখানে কর্মজীবী নারীর সিট প্রাপ্তির জন্য আবেদন করার চাপ তেমন নেই। হোস্টেল সম্প্রসারণ করা হলে এই হোস্টেলের সিট ২০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৫০০।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কর্মজীবী হোস্টেলের মাধ্যমে দুই হাজার ৩৮৪ জন কর্মজীবী নারীর নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। আবাসন সংকট কমাতে সরকার ঢাকার কর্মজীবী হোস্টেলগুলোর ওপর ১০তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে ঢাকার বাইরে গাজীপুরে কালীগঞ্জ উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ কাজ শুরু করে। সাভারের আশুলিয়ায় কর্মরত মহিলা গার্মেন্ট শ্রমিকদের আবাসনের জন্য হোস্টেল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও নালিতাবাড়ী, সোনাইমুড়ি, আড়াইহাজার ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর