শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হলি আর্টিজানে নিহতদের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

হলি আর্টিজানে নিহতদের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ

গতকাল হলি আর্টিজানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিদেশিরাও -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম হামলাগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা অন্যতম। ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই ঘটে যাওয়া এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ স্মৃতি আজও মানুষ ভুলতে পারেনি। সেদিন জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন। জঙ্গিদের ছোড়া বোমার আঘাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং অনেকে আহত হন। প্রতি বছর হামলার দিনটি এলেই নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে হলি আর্টিজানে ছুটে যান নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল সকালে ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলার ৩ বছর উপলক্ষে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর হলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ দেশি-বিদেশি নাগরিক ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। শ্রদ্ধা জানানো হয় র‌্যাব, ডিএমপি, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও বিএনপির পক্ষ থেকেও। সকাল ১০টায় হলি আর্টিজানের গেট সবার জন্য খুলে দেওয়ার পর ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছি। সারা বিশ্বে জঙ্গি হামলা হচ্ছে। শুধু ২০১৮ সালেই ইউরোপজুড়ে ১২৯টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে বোঝা যায়, জঙ্গিরা বৈশ্বিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়নি। সকাল সোয়া ১০টার দিকে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সবাই হয়তো কোনো অভিযানে নিহত হয়েছেন, নয়তো গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় রয়েছেন। আমরা আশা করছি, এ হামলার দ্রুত বিচারকাজ শেষ হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নিহতদের পরিবার তাদের অপূরণীয় ক্ষতির ক্ষেত্রে একটু হলেও সান্ত্বনা পাবে। হলি আর্টিজানে হামলার মতো আর কোনো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে লক্ষ্যে পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কাজ করছে। সকাল ১০টার দিকে আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

ইতালিয়ান নাগরিক ফাদার রিকার্দো তোবানিল্লি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়। অল্প কিছু মানুষ অসুবিধা করছে। এজন্য কিছু চিন্তা আছে, সতর্কতাও আছে। তবে ভয়ের কারণ নেই। আমরা নিরাপদেই আছি। নিহত ৯ ইতালিয়ান নাগরিকের মধ্যে ছয়জনই তার পরিচিত ছিল। ঘটনার দুই দিন আগেও ক্রিস্টিয়ানার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভাবতেই পারেননি দুই দিন পরেই তাদের এমন মৃত্যু হবে।

এ ছাড়াও ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত, ইতালির রাষ্ট্রদূত, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর স্ত্রী ইতালির নাগরিক আনেজি বারেলো ও ৪৬ বছর ধরে এ দেশে বসবাস করা ফাদার আতিলিও ফুল দিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধা জানান।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই ৫ অস্ত্রধারী জঙ্গি হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে ৩ বাংলাদেশি, ৭ জাপানি, ৯ ইতালীয় ও ১ ভারতীয়কে নির্মমভাবে হত্যা করে। দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা হয়। সেই মামলায় জেএমবির স্থানীয় শাখাকে অভিযুক্ত করা হয়। দুই বছর তদন্তের পর সিটিটিসি ইউনিট গত বছরের ২৩ জুলাই ৮ জন জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে ঢাকার একটি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

সর্বশেষ খবর