বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আড়তের নামে ছাগলের হাট

জমজমাট হাসিল বাণিজ্য

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীতে আড়তের আড়ালে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে ছাগলের হাট। আর এ হাটে চলছে অসাধু কারবারিদের জমজমাট হাসিল বাণিজ্য। যাত্রাবাড়ীর মৃধাবাড়ী এলাকায় ওই হাটের সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘খাজা গরিবে নেওয়াজ ছাগল-ভেড়ার আড়ত’। দেশের প্রায় ৪০টি জেলা থেকে অবৈধভাবে পরিচালিত এ হাটে আসে ছাগল-ভেড়া। পাইকার ও সাধারণ ক্রেতারাও এখান থেকে ছাগল-ভেড়া কেনেন। সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত।

প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপর টিনশেডের এ হাটে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়। লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার। তবে হাটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয়দের। আশপাশের অপরিচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের জন্য হাটটিকে দায়ী করেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে অবৈধভাবে পরিচালিত এ হাটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, প্রত্যেক ক্রেতার কাছ থেকে হাসিলের আদলে ১০০ টাকার লাল রঙের রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হয়। অথচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে কোনো হাট নেই। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কোনো রাজস্ব আদায় হয়নি। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে কোথাও কোনো হাট বসানোর সুযোগ নেই। ওখানে যা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটটির পেছনে নুর হাজীর বাড়ি। তিনিই এ হাটের মোট জমির তিন ভাগের মালিক। আর হাটের পুব পাশে টিনশেডে ঘেরা অংশটি সরকারি। সেই জমিও অবৈধভাবে দখল করে হাট বসানো হয়েছে। এ হাটে মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি করপোরেশন।

এখানে ১০ বছর ধরে ছাগলের ব্যবসা করছেন বিল্লাল হোসেন। তিনি জানান, এ হাটে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাগল ওঠে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, রংপুর থেকে দামি ছাগল আসে। বিশেষ করে ভারত থেকে আনা তোতা, মেওতি, আজমেরী ও গারোল ছাগল পাওয়া যায় সেখানে।

অবৈধভাবে এ হাট বসানোর বিষয়ে জানতে হাজী নুরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা যায়, ওখানে ৫০০ থেকে ৬০০ ছাগল ব্যবসায়ী রয়েছেন। সারা দেশ থেকে ছাগল বিক্রির জন্য ওখানে তোলা হয়। আর পাইকাররা সেখান থেকে কিনে নিয়ে ব্যবসা করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘সেখানে হাট বসানোর বিষয়ে আমরা অবগত নই। আড়ত শব্দটি গরু-ছাগলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। যারা অবৈধভাবে ওই হাট বসিয়েছেন তারা আড়ত নাম দিয়ে একটু চালাকির চেষ্টা করেছেন। আমরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর