শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানবেতর জীবন ডুবুরিদের

রাহাত খান, বরিশাল

মানবেতর জীবন ডুবুরিদের

পানির নিচে এক অন্য জগৎ। এই জগতে হারানো মানিক খুঁজে বেড়ান তারা। একবার পানিতে ডুব দিলে ফের তীরে উঠতে পারবেন কিনা সে নিশ্চয়তা নেই। জীবনের যেমন নিশ্চয়তা নেই, তেমনি নেই চাকরির নিশ্চয়তাও। দৈনিক মাত্র ৫০০ টাকা বেতনে নিজেদের খাদ্য চাহিদাই মেটাতে পারেন না তারা। তার ওপর আবার সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে জীবন আর চলে না। পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বেতন বাড়াতে বললেই কথায় কথায় চাকরি যায়। কারণ তাদের চাকরি স্থায়ী নয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থেকেও বিদায়বেলায় খালি হাতে ফিরতে হয়। তাই মানবেতর জীবনই তাদের সঙ্গী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরিরা। ডুবুরিদের মানবেতর জীবনের কথা স্বীকার করে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর সদস্য অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল ইসলাম। নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশে প্রায়ই নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। আর তখনই ডাক পড়ে ডুবুরিদের। নদীর তলদেশে ডুবে যাওয়া নৌযানের অবস্থান শনাক্ত করাসহ মূল্যবান মালামাল খুঁজে ফেরেন তারা।

 ডুবে যাওয়া নৌযানে আটকা পড়া মৃতদেহ এবং হারানো মালামাল উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ডুবুরি মনিরুল ইসলাম জানান, পানির নিচে ডুব দিয়ে আর উঠতে পারবেন কিনা সেই নিশ্চয়তা নেই। একজন ডুবুরি কাজ করতে গিয়ে মারা গেলে, তার লাশটি কোনোমতে বাড়ি পাঠানো হয়।

এরপর তার পরিবারের খোঁজ নেয় না কেউ। তাই চাকরির নিশ্চয়তা চান ডুবুরিরা। ডুবুরি মো. রবিউল ইসলাম লিপু জানান, বর্তমান দৈনিক ৫০০ টাকা হারে বেতন দেওয়া হয়। ঈদ-কোরবানিসহ বিশেষ কোনো উৎসবে বোনাস দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, একজন ডুবুরির প্রয়োজন প্রতিদিন ৪ হাজার ৫০০ ক্যালোরি খাবার। মাত্র ৫০০ টাকা হারে বেতন দিয়ে সংসারই চলে না। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরি স্থায়ীকরণসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। ডুবুরি ইমাম হোসেন বলেন, ১১ বছর ধরে তিনি ডুবুরির কাজ করছেন। সামান্য বেতনের চাকরি হওয়ায় না পারছেন পরিবারের আর্থিক জোগান দিতে, না পারছেন নিজের প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদা মেটাতে। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মো. বেল্লাল ডুবুরি জানান, তার এক ভাই পটুয়াখালীতে ডুবুরির কাজ করতে গিয়ে মারা যান। ওই পরিবার সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। এখন তার দুই ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। তাদের অবসরের পর কিংবা কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেলে জীবনে যে কি হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই চাকরি স্থায়ীকরণসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারপ্রধানের কাছে তিনি দাবি জানান। বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন) মো. শাহজাহান  জানান, সারা দেশে বিআইডব্লিউটিএর ১০ জন ডুবুরি রয়েছে। এরমধ্যে ৩ জন স্থায়ী এবং ৭ জন অস্থায়ী। অচিরেই তারা চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাবেন বলে আশা করেন তিনি। সম্প্রতি বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে নৌযান উদ্ধার মহড়া পরিদর্শনে আসা অতিরিক্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সদস্য (অপারেশন) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ডুবুরিদের মানবেতর জীবনের বিষয়টি তারা অবগত আছেন। তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়াসহ চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর