সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

১৬ বছর পর সিলেট যুবলীগের সম্মেলন

পদপ্রত্যাশী নেতাদের তোড়জোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৩ সালের ৩০ জুলাই। সম্মেলনের মাধ্যমে জগদীশ দাস সভাপতি ও আজাদুর রহমান আজাদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর কেটে গেছে দেড় দশকের বেশি সময়। নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন সক্রিয় আওয়ামী লীগে। দীর্ঘদিন থেকে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই নামেমাত্র চলছে জেলা যুবলীগ। মহানগর যুবলীগেরও অবস্থা প্রায় একই। ১৩ বছর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই শাখার সর্বশেষ সম্মেলন। পাঁচ বছর আগে আহ্বায়ক কমিটি হলেও তারা আয়োজন করতে পারেনি সম্মেলন। ফলে সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে নিস্তেজ অবস্থায় যুবলীগ। তবে হঠাৎ করে এই যুবলীগে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। বর্ধিত সভা করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নেমেছেন যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা। কেন্দ্রে লবিংয়ের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। আগামী ২৭ জুলাই জেলা ও ২৯ জুলাই মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে পদপ্রত্যাশীদের তৎপরতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাউন্সিলরদের (ভোটারদের) নিজেদের পক্ষে নিতে প্রার্থীরা এখন ছুটছেন দ্বারে দ্বারে। কাউন্সিলরদের ম্যানেজ করতে আওয়ামী লীগ নেতাদেরও দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। এ ছাড়া নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি রাজপথেও চলছে শোডাউন। এখন পর্যন্ত সিলেট জেলা যুবলীগে দুটি প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমদ ও খাদিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ মিলে করেছেন একটি (শামীম-আফসর) প্যানেল। অপর প্যানেলে (সেলিম-শামীম) রয়েছেন মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম উদ্দিন ও জেলা পরিষদ সদস্য শামীম আহমদ।

এ ছাড়াও সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক জাফরান জামিল। প্যানেল ছাড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিহিতগুপ্ত চৌধুরী বাবলা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর।

এদিকে মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদে আলোচিত হচ্ছে বর্তমান আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য শান্ত দেবের নাম। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিক জায়গীরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আহমদ সেলিম, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুবেদুর রহমান মুন্না, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ রিপন।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে জগদীশ ও আজাদের নেতৃত্বে সিলেট জেলা যুবলীগ পুনর্গঠনের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন থানায় আয়োজন করা হয় সম্মেলনের। কিন্তু ২০০৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে শপথ গ্রহণের আগে দলীয় পদ ছাড়তে হয় জগদীশ দাস ও আজাদুর রহমান আজাদকে। এরপর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে তাদের স্থলাভিষিক্ত হন সিনিয়র সহসভাপতি শামীম আহমদ ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার মহসিন কামরান। ভারপ্রাপ্তরা ১১ বছর জেলা যুবলীগ চালালেও জেলার ১৩ থানার একটিতেও সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেননি। এর মধ্যে কেন্দ্র থেকে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় কেন্দ্র থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। বাকি উপজেলাগুলোর মধ্যে কমিটি ছাড়াই চলছে সিলেট ও বিয়ানীবাজার যুবলীগ।

একইভাবে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামীম আহমদ সভাপতি ও আবদুর রহমান জামিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে আলম খান মুক্তিকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিও আয়োজন করতে পারেনি সম্মেলনের।

সিলেট জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমদ জানিয়েছেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এখন কাউন্সিলে কারা ভোটার হবেন সে তালিকা তৈরি হচ্ছে। কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটে তাদের আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।

 

মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি জানান, মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সবকটিতে সম্মেলন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটির নেতারাই কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগর শাখার শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাই করবেন। এ নিয়ে মহানগর যুবলীগে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর