মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আরও এক ধাপ এগোল পদ্মা সেতু

২৯৪টি পাইলের সব কটি সম্পন্ন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

২৯৪টি পাইলের সব কটি শেষ। রবিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে পাইলের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা হয়েছে। এতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল পদ্মা সেতু। এত দিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যামার পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাইলিংয়ের কাজ চলেছে, যার ক্ষমতা ছিল ৩৫০০ টন জুল। এ ছাড়া ২৪০০ ও ১৫০০ টন জুল ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটো হ্যামার রাতদিন নূপুরের ছন্দে তালে তাল মিলিয়ে পাইলিংয়ের কাজ করেছে। গতকাল সম্পূর্ণ সফলভাবে এসব হ্যামারের কাজ শেষ হলো। শেষ হলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের চ্যালেঞ্জিং যেসব নদী রয়েছে, এর মধ্যে পদ্মা একটি। এখানে শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে ৪২টি পিলার এখন প্রস্তুত হতে চলেছে। এরপর পিলার শেষ হলেই দ্রুত স্প্যান বসানোর কাজও শেষ হবে বলে জানিয়েছেন মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলার থাকবে এবং তার ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। ৪২টি পিলারে ২৯৪টি পাইল বসছে, যার ২৯৪টি পাইলই সম্পন্ন হলো। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ১৪টি স্প্যান ইতিমধ্যে     পিলারে বসেছে। আরও ১০টি ইতিমধ্যে চীন থেকে মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে এসে পৌঁছেছে। এগুলোতে ফিটিংসের কাজ চলছে। অবশিষ্ট ১৭টিও তৈরি হচ্ছে চীনেই। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪২টি পিলারের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩০টি পিলার সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১৩টি পিলারের কাজও শেষের দিকে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যানটি পিলারের ওপর বসিয়ে শুরু হয় ফুলে ফুলে মালা গাঁথার মতো একের পর এক স্প্যান বসানো। আর তৈরি হতে থাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এসবের মধ্য দিয়ে খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। এরই মধ্যে সেতুর দুই কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। এখানে প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কো¤পানি। নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন এবং প্রকল্প এলাকাজুড়ে সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ কঠোর নিরাপত্তায় রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তে ভায়াডাক্টের পাইলিং এবং পিলারের কাজ শেষে এখন গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে দুই প্রান্তে টোল প্লাজা এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক। স্বপ্ন ও সম্ভাবনার এ সেতু নিয়ে কোনো অপপ্রচার আগেও কাজে আসেনি, এখনো কোনো গুজবে এর নির্মাণকাজ বিঘ্নিত হবে না। পদ্মা সেতু এক সাহসী স্বপ্নযাত্রা। এটা গন্তব্যে পৌঁছবেই- এ প্রত্যাশায় দেশবাসী।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর